এপ্রিলে পারিবারিক সহিংসতার শিকার ৪২৪৯ নারী, প্রথমবার নির্যাতিত ১৬৭২ জন
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটির মধ্যে বেড়েছে নারী নির্যাতন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপ বলছে, শুধু এপ্রিল মাসেই দেশে ৪২৪৯ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন শারীরিক নির্যাতন, প্রায় ২ হাজার নারী মানসিক নির্যাতন ও ১৩০৮ জন অর্থনৈতিক নির্যাতনের (খাদ্য ও অর্থাভাব) শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮৫ জন। এ সময়ে ৩৩টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার, ‘বাংলাদেশে লকডাউন পরিস্থিতিতে নারী নির্যাতন’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
জরিপ অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ৪২টি। এর বাইরে, অন্তত ৪২৪ শিশু তাদের পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের ২৪টি সহযোগী সংস্থা ২৭ জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরিপটি চালানো হয়েছে। এসময় মোট ১৭ হাজার ২০৩ জন নারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নির্ধারিত প্রশ্নের ভিত্তিতে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম জানান, এ তথ্যগুলো এখনো বিশ্লেষণ করা হয়নি। তাই লকডাউনের কারণেই পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সেটি এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে ১৬৭২ নারী লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইউএনএফপিএ পরিচালিত বৈশ্বিক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বব্যাপী গৃহ নির্যাতন ২০ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধতার মাঝে কেবল কয়েকটি জেলায় জরিপটি চালানো হলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নির্যাতনের চিত্রও একইরকম বলে মনে করে এমজেএফ। আগামী মাসেও এই ধরনের জরিপ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন শাহীন আনাম।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছুটির মধ্যে খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য কর্মসূচির মতো পারিবারিক সহিংসতা বন্ধের ব্যাপারেও সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি গৃহ নির্যাতন রোধে কার্যক্রম বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও ছুটির মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হটলাইন ১০৯ ও পুলিশি সহায়তার জন্য ৯৯৯ আরও বেশি কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছেন বক্তারা। পাশাপাশি, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা যাতে আশ্রয় পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা, করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল চলমান রাখার জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ দ্রুত পাশ করার পরামর্শও জানানো হয়েছে।
এর বাইরে, গণমাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এমজেএফ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া ও বান্দরবান থেকে সহযোগী সংস্থার সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন।