স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ‘অসম্মানজনক’ পরিপত্র প্রত্যাহারের দাবি

0

সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক পরিপত্র জারি করেছে— এমন অভিযোগ তুলে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এসব পরিপত্র প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করার পর থেকে সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ তাদের মহান পেশার সম্মান সমুন্নত রাখতে চিকিৎসসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। সারাবিশ্ব তাদের এ আত্মত্যাগকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্মানিত করেছে।

বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যতীত সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাপ্রদান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ৬০০ চিকিৎসকসহ সহস্রাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসুলভ পরিপত্র জারি করেছেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ চিকিৎসকদের জন্য প্রেরিত নকল ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী গ্রহণ না করায় এবং প্রকৃত সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করার দাবি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিপত্র জারি করার পর প্রত্যাহারও করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান এবং পরিপত্র জারির ক্ষেত্রে চিকিৎসক সমাজের প্রতি কোনো বিশেষ মহলের আক্রোশ ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের যৌথ বিবৃতিতে চিকিৎসকদের প্রতি সরকারের এহেন বিমাতৃসুলভ, প্রতিহিংসামূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার চরম সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, ‘প্রেষণে থাকা চিকিৎসকবৃন্দ তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠনের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এমনকি উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের করোনা ইউনিটের বিধি মোতাবেক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। এমতাবস্থায় তাদের প্রেষণ স্থগিত করে অন্যত্র পদায়ন করা হলে তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে এবং চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে।’

তারা বলেন, “২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকারের উচিত ছিল জরুরিভিত্তিতে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে একনায়ক মানসিকতায় এককভাবে দলীয় বিবেচনায় মহামারি মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শুরু থেকেই সমন্বয়হীন বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের স্ক্রিনিংয়ের সামর্থ্য সরকারের ছিল না, এমনকি তাদের যথাযথভাবে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে রাখতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সারাদেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা মহামারি প্রতিরোধের যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হয়নি। উপরন্তু লকডাউনকালীন প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। অপরপক্ষে তাদের দলীয় ক্যাডাররা সারাদেশে ত্রাণের চাল লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে।”

বিবৃতিতে ড্যাব নেতারা সরকারকে শুভ মানসিকতা নিয়ে জনগণের জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে এ যাবত জারিকৃত হঠকারী পরিপত্র প্রত্যাহারপূর্বক ভবিষ্যতে অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক, বিমাতৃসুলভ, প্রতিহিংসাপরায়ন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় আহ্বান জানান এবং প্রয়োজনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আরও নবীন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে অনতিবিলম্বে উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে প্রেষণে থাকা চিকিৎসকদের শিক্ষা কার্যক্রম চলু রাখার ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com