সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?’ : মির্জা ফখরুল

0

করোনাভাইরাস সংক্রামণে সরকারি তথ্য-উপাত্ত সঠিক নয় দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে।

তিনি বলেন,‘আজকে সরকারের তরফ থেকে যে আক্রান্ত, অসুস্থ, সুস্থ এবং মৃত্যুর যে সংখ্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে- আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এটা বিজ্ঞানের কথা। সংক্রামণ যখন বাড়ছে, উপর দিকে যাচ্ছে তখন মৃত্যু ২/৩/৪ এ এসে পৌঁছাছে। অথচ সেদিনই আপনার ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক তিনি বলছেন যে, আমার এখানে ৩১ জন মারা গেছেন, কয়েকজনের ডায়গোনেসিস হয়েছে করোনা পজেটিভ, বাকীদেরটা আমরা এখন পর্যন্ত টেস্ট করিনি। আমাদের কাছে তথ্য হচ্ছে যে, টেস্ট করা হয় না, নির্দেশটা হচ্ছে টেস্ট করতে মাঝে মাঝে।’

তিনি আরো বলেন,‘এটাকে কী সরকার বলবেন আপনারা? যাদের এতোটুকু দায়িত্ববোধ নেই্, যারা চরম দুর্দিনেও জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?’

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের পিপিই বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন,‘আজকে প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের, প্রশ্ন হচ্ছে, নাথিং ইজ মোর প্রেসাচ দেয়ার লাইফ। আর এরা খুলে দিয়েছেন শপিং মল। কেন? ঈদের বাজার করতে হবে আর অর্থনীতিকে চালু রাখতে হবে। এতোদিন কী করলেন? এই যে মধ্য আয়ের দেশে চলে গেলেন, আপনাদের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে রোল মডেল। কেন বর্তমান অবস্থাকে ধারণ করার মতো শক্তি এই অর্থনীতির তৈরি হয়নি। কারণ আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলেছেন, মানুষকে প্রতারণা করেছেন, ভুল বুঝিয়েছেন।’

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন,‘আমরা খুব পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। যখন স্বাভাবিক অবস্থা ছিলো তখনও ব্যর্থ হয়েছেন, আজকে যখন যুদ্ধাবস্থা বলা যেতে পারে চরম দুযোর্গ-মহামারী, সেই সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আমরা যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি তখন আপনি সেটাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে কোনো দরকার নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব অত্যন্ত সুবেশী এবং টিপটপ জেন্টেলম্যান। তিনি সুযোগ পেলেই বিএনপিকে আক্রমণ করেন এবং তার সুন্দর সুলোলিত ভাষায় সেই আক্রমণগুলো করেন।’

‘আমি একটা কথা বলতে চাই সেটা হচ্ছে যে, আপনি যে কথাগুলো বলেন, আমি কী সেটা পরে আবার শুনেন কি বলছেন? শুনা উচিত এজন্য যে, তাহলে আপনি নিজেই বুঝবেন যে, জনগণ আপনার কথা বিশ্বাস করছে না, তাহলে নিজেই বুঝবেন যে, এই কথাগুলো সঠিক নয়।’

গার্মেন্টস খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘আজকে প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই যে গার্মেন্টসগুলোকে উনারা (সরকার) খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকাগুলো থেকে সব চলে আসলো যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিলো আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত আসলো। আজকের পত্রিকায় নিউজ আছে যে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিন দিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি তার সন্তান-স্ত্রী, তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানে সে মারা গেছেন।’

‘এই যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা (সরকার) গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন- এটা আসলে আপনারা ক্ষমাহীন অপরাধ করেছেন। আমি তো মনে করি যে, দিস ইজ এ ক্রিমিনাল অফেন্স। এই ধরণের ভুল, এটা ভুল নয়, এগুলো হচ্ছে ক্রিমিনাল অফেন্স। এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জীবনের অধিকার তাদের ফান্ডামেন্টাল রাইট টু লিভ (মৌলিক অধিকার)। সেই জায়গায় তারা আঘাত করছেন অর্থাৎ ইউ হ্যাভ নট রাইট টু লিভ টু ডায়িং। কিচ্ছু যায় আসে না। অবস্থাটা আজকে সেরকম হয়ে গেছে।’

করোনাভাইরাস সংবাদ সংগ্রহের গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন,‘দেখুন-গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশ করছেন তাদের কি অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় ছাটাই হয়ে গেছেন এই দুঃসময়ে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-টেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে কিন্তু সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। এই যে সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যেটাকে আমরা বলেছি যে পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি। সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই।’

‘আমি এই সভা থেকে আহ্বান জানাবো সংবাদ মাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদ কর্মীদেরকে বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকুরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে। তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিষ্কার আহ্বান, অবিলম্বে সকল গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দিন।’

পাশাপাশি রাজবন্দিদেরও মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। এসময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যবস্থাপনায় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিই) প্রদান করা হয়। পরে রিপোর্টারদের হাতে পিপিই তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com