দিনমজুরদের মাসে ৫ হাজার টাকা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির

0

দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির মানুষদের মাসিক পাঁচ হাজার টাকা হারে প্রাথমিকভাবে তিন মাসে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা নগদ সাহায্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহ্বান জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে জরুরি আবশ্যকীয় সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির মানুষের মাসিক পাঁচ হাজার টাকা হারে প্রাথমিকভাবে তিন মাসে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা নগদ সাহায্য-সহায়তা সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পৌঁছানো নিশ্চিত করতেই হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এছাড়া কর্মহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও রান্না করা খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোভাবেই রাজনৈতিক দলের সদস্যদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে না।

এখনো সময় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সমন্বেয়ে একটি ট্রান্সফোর্স গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।

আরও কিছু ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ এবং ধান ক্রয় সামরিক বাহিনীর ওপর ন্যাস্ত করতে হবে।

তিনি বলেন,  স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয় মাসের শিক্ষা ব্যয় (ছাত্র বেতন ইত্যাদি) সরকারকে বহন করতে হবে। সকল লিল্লাহ বোর্ডিং, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী তিন মাসের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন,   বর্তমানে ত্রাণ চুরি এবং স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, জাতি আজ একা মহাক্রান্তিকালের মুখোমুখি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব, দুর্নীতি এ  সংকটকে গভীরতর করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির এহেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রোগ পরীক্ষার মূল সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে আইইডিসিআরকে সরিয়ে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে। হঠাৎ পরীক্ষার দায়িত্বে বড় পরিবর্তনকে ঝুঁকিপূর্ণ, পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার জের বলে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তিনি বলেন, নতুন পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রিতায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খোদ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাই প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। দুটি হাসপাতালের পরিচালক দুজন চিকিৎসককে ওএসডি বা বদলি করা হয়েছে।

বিএনপি মুখপাত্র বলেন, পরবর্তীতে সরকারি অনুসন্ধানেই সরবরাহকৃত মাস্ক, পিপিই ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত হয়েছে এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষমা চেয়েছে। তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো কেন?

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, অভিযোগ উঠেছে এমন আলোচিত ২৬টি ঘটনায় জড়িত ছিলেন ৪৫ জন যাদের সিংহভাগই সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মতপ্রকাশের কারণে মামলা হয়েছে ২৫ জনের নামে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ও জরিমানা করা হয়েছে ৫৪ জনকে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে ফেরা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর তুঘলকি কাণ্ড ঘটানো হলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশনা দিয়ে। যতই বিজেএমইএ এবং সরকারের সমন্বয়হীনতার কথা বলা হোক না কেন, এ জন্য সরকার দায় এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, যেখানে মানুষের সামাজিক দূরত্ব মানতে অনীহা, তখন বিশেষ করে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার পর কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং হবে, এতে যথেষ্ট শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, হাজার হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরের শ্রমিকদের ঢাকায় না আনার পূর্বশর্ত থাকলেও বাস্তবে তা পালিত হচ্ছে না।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার ৮০-৯০ ভাগ। গাজীপুরে একই অবস্থা। গাজীপুরের পুলিশ সুপার সম্প্রতি গার্মেন্টস খুলে দেওয়াকেই এ জন্য দায়ী করেছেন। সাভারের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও লিখিতভাবে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করার জন্য সরকারকে জানিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, রমজান ও ঈদের কথা বলে ১০ মে থেকে দোকানপাট খুলে দিয়েছে সরকার। এতে করোনার পিক পয়েন্টে এসে সরকার পুনরায় সামাজিক সংক্রমণের পথ আরও সুগম করে দিল। গার্মেন্ট সেক্টরে সৃষ্ট ঝুঁকির সঙ্গে দোকানপাট খুলে দেওয়ার ফলে সম্ভাব্য ঝুঁকি অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মত কাজ করবে।

ত্রাণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা অনিয়ম তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। এখনো নিয়মিত দেখা যাচ্ছে ৬৪ জেলাতেই অভুক্ত মানুষ রাস্তা আটকে খাবার বা ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ করছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বাড়িঘর ঘেরাও করছে, রাস্তায় ত্রাণের গাড়ি থামিয়ে ত্রাণ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এহেন পটভূমিকায় সরকারদলীয় যারা ত্রাণ চুরি করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কড়া ব্যবস্থা না নিয়ে চাল চুরির সংবাদ ছাপানোর কারণে সাংবাদিক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এ মামলা হচ্ছে।

তিনি বলেন,জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে এ মহাদুর্যোগ মোকাবিলা সময়ের দাবি। অন্যথা এর অবিশ্যম্ভাবী পরিণতির জন্য এককভাবে বর্তমান সরকারকেই দায়ভার বহন করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.