সাহরি ও ইফতারে যেসব খাবার বেশি উপকারী
আগের খাদ্যাভ্যাসের অনেকটাই বদলে গেছে এখন। বারবার বাজারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে একইরকম খাবার খেতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এদিকে রোজায় একটু ভাজাভুজি খাওয়ার জন্য মন কেমন করাও স্বাভাবিক। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই সময়ে এড়িয়ে চলতে হবে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার। বরং এমনকিছু খেতে হবে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বাড়িতে একইরকম খাবার থাকলেও রান্নায় ভিন্নতা এনে তা দিয়েই তৈরি করা সম্ভব স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক খাবার। রোজায় কোনোভাবেই যেন শরীরে পুষ্টির ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাহরিতে খাবারে রুচি বাড়াতে একটু বৈচিত্র আনতেই পারেন। খুব সাধারণ খাবারও তখন খেতে অসাধারণ লাগবে। ইফতারেও ভাজাপোড়ার বদলে থাকুক স্বাস্থ্যকর খাবার।
সাহরি
এই পরিস্থিতিতে ভাত/রুটি-সবজি বা ভাত/রুটি-মুরগির মাংস খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। তবে কম পরিশ্রমেই সাহরির খাবারে আনতে পারেন বৈচিত্র।
ছোট ছোট করে বরবটি ও গাজর কেটে অল্প সর্ষের তেলেই কম আঁচে সতে করুন। অল্প টমেটো দিন। ডিম ফেটিয়ে দিয়ে ঝুড়ো বানিয়ে তাতে দিয়ে দিন। এবার তাতে যোগ করুন রাতের বেঁচে যাওয়া ভাত। ভালো করে নেড়েচেড়ে স্বাদ মতো লবণ, মরিচ ও ধনেপাতা মিশিয়ে নামিয়ে নিন। ডিমের বদলে সেদ্ধ চিকেনও দিতে পারেন। সাহরিতে স্বাদের পরিবর্তন হবে সহজেই।
রুটি-তরকারি বা ডাল-ভাত-সবজি-মাছ এসব খেতে ইচ্ছে না হলে মাঝেমধ্যে রুটির রোল বানাতে পারেন। পরোটার রোলের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর হবে। একটা কি দু’টি ডিম, পেঁয়াজ, শসা ও টমেটো দিয়ে।
এমনভাবে খেতে হবে যাতে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুই-ই বজায় থাকে। রসনার খাতিরে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করার সময় এটা নয়। ইচ্ছে হলে নেট ঘেঁটে এ রকম আরও অনেক সহজ রেসিপি দেখে নিতে পারেন। মাঝেমধ্যে সেসব চেষ্টা করে দেখলে সময় যেমন কাটবে, খাবারেও বৈচিত্র আসবে।
ইফতার
এই সময় ইফতারের খাবার কেমন হবে তাই নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয়। অন্য সময়ের মতো, চপ-বেগুনি, ভাজাপোড়া খাওয়ার দিন এখন নয়। তাই ইফতারেও নজর দিন দরকারি পুষ্টিগুণের খাবারে। বাড়িতে ছোলা থাকলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। এবার পেঁয়াজ, টমেটো, শসা, লেবুর রস, লবণ, কাঁচা মরিচ, একটু ধনেপাতা মিশিয়ে সালাদ বানিয়ে নিন। তাতে দু’-চার টুকরো সেদ্ধ আলু থাকলে তো কথাই নেই। ছোলা না থাকলে বাদাম দিয়েও বানাতে পারেন। ছোলা সেদ্ধ করে ভুনা করে খেলেও উপকার মিলবে।
মুড়ি বা শুকনো খোলায় ভাজা চিড়া নিয়ে তাতে অল্প বাদাম বা ছোলা, একটু পেঁয়াজ, টম্যাটো, শসা, লেবুর রস, লবণ, কাঁচা মরিচ, একটু ধনেপাতা মিশিয়ে মেখে নিন। । মুড়ি মচমচে রাখতে চাইলে শসা দেবেন না।
কখনো রুচি বদলাতে বাড়িতে বানানো হালকা চাউমিনও চলতে পারে। তবে তা অবশ্যই পরিমাণে কম। ফ্রুট সালাদ কিংবা স্মুদি খান। নয়তো আস্ত ফলই খেয়ে নিন। চিনেবাদাম খেতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর শরবত থাকুক প্রতিদিনের ইফতারে। বেল, লেবু, ইসুবগুলের শরবত খেতে পারেন। মৌসুমী বিভিন্ন ফলের রস খেতে পারেন।
রাতের খাবার
মন মতো মাছ-মাংস প্রতিদিন পাবেন না। তাই বলে যেন প্রোটিনে ঘাটতি না হয়। ডিম এখনও যথেষ্ট সহজলভ্য। কাজেই হালকা ভেজে, ডালনা করে বা সেদ্ধ করে যেমন খুশি খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশ গোটা তিনেক খেলেও ক্ষতি নেই।
ছোট একবাটি ডাল খান প্রতিদিন। একেকদিন একেক রকম ডাল খেলে বেশি উপকার পাবেন। সঙ্গে নিরামিষ প্রোটিন হিসেবে মাছ-মাংস-ডিমের বদলে ছোলা বা রাজমার তরকারি খেতে পারেন। এতে ফাইবারও বেশি পাবেন।
সবজি নানা রকম খেতে হবে। কেটে-বেছে রান্না করতে অসুবিধে হলে বা মানানসই সবজি না পেলে সবজি সেদ্ধ করে খান। দু’ফোটা সরিষার তেল, লবণ ও কাঁচা মরিচ মেখে গরম ভাতে খারাপ লাগবে না। ডালের মধ্যেও দিয়ে দিতে পারেন। কিংবা তৈরি করতে পারেন সবজি দিয়ে মাছের ঝোল।
আগে হয়তো ব্রাউন রাইস খেতেন। এখন না পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে উপকারের সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে যদি ভাত অল্প নিয়ে, ডাল ও শাক-সবজি বেশি খান। এর ফলে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ঢুকবে শরীরে। এই বাজারে ব্রাউন রাইসের কাছাকাছি আয়রন পেতে ভাতের পাতে একটুকরো লেবু খেলেই হলো। লেবুর ভিটামিন সি খাবারের যতটুকু আয়রন আছে তার সবটুকু যাতে শরীরে শোষিত হয় সেই ব্যবস্থা করবে।