গার্মেন্টসের নামে আনা ২৬ হাজার টন ফ্যাব্রিক কনটেইনার থেকে গায়েব!
চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার সুরক্ষিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভ্যন্তর হতে একটি ৪০ ফুট(ডাবল সাইজ) কনটেইনারের পণ্য গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কনটেইনার খুলে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় কোনো পণ্যের অস্থিত্ব খুজে পায়নি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একই সিএন্ডএফ এজেন্ট অপর একটি পণ্য চালানের মালামাল খালাস নিতে ২টি অতিরিক্ত কাভার্ড ভ্যান বন্দর অভ্যন্তরে নিয়ে গিয়ে উল্লেখিত কনটেইনারের পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাথে জড়িত বলে ধারনা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।
কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, রাজধানির ভাটারার লুক্রেটিভ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ সলিউশন নামীয় আমদানিকাকের নামে পণ্য চালানের বিল অব এন্ট্রি ব্যবহার করা হয়েছে এই পণ্য গায়েবের ঘটনায়। এতে আমদানিকারকের পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট চট্গ্রামের আগ্রাবাদের আর এম এসোসিয়েটস কর্তৃক দাখিলকৃত বি/ই(বিল অব এন্ট্রি) নং- ৫৭৮৮১৪, তারিখ: ১৯-০৪-২০২০ এর মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য আর্ট কার্ড ৩০০জিএসএম খালাস গ্রহণের সময় প্রয়োজনীয় ৪টি গাড়ির অতিরিক্ত আরও ২টি গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করানো হয়।
এসব গাড়ির মাধ্যমে কেমস ফ্যাশন লি:, ৩৭৬, দক্ষিণ বাড্ডা, সবুজবাগ, ঢাকা কর্তৃক ফ্যাব্রিক্স ফর ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড রেডিমেইড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নামে চীন থেকে এমসিসি ড্যানাং জাহাজযোগে গত বছরের ০৩ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে সুকৌশলে পাচার করা হয়। কাস্টমসকে ফাকি দিতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও পণ্য চালানটির বিপরীতে কোনো বি/ই দাখিল না করে শুল্ক করাদি পরিশোধ না করে ফেলে রাখে এবং চোরাচালানের মাধ্যমে খালাস করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, এর মধ্যে একটি কাভার্ড ভ্যানের নং ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-০৫৬৯ চট্টগ্রাম বন্দর থানায় আটক রয়েছে। উক্ত কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে বিএল নং. ৫৯১৮৮৫১১৮এর বিপরীতে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকা আমদানিকারক কেমস ফ্যাশন লি. কর্তৃক বিএল নং. ৫৯১৮৮৫১১৮এর কনটেইনার নং- এমএসকেইউ০১০৮৫৭৮(এফসিএল) সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ডিজিএফআই, এনএসআই এর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রোববার চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফোর্স কিপ ডাউন করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। আইজিএম(ইমপোর্ট জেনারেল মেনিফেস্ট) অনুযায়ী কনটেইনারটিতে মোট ২৬ হাজার ৩শ’ কেজি ফ্যাব্রিক এর ঘোষনা রয়েছে। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় কনটেইনারটিতে কোন পন্য পাওয়া যায়নি।
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (এআইআর) নূর এ হাসনা সানজিদা অনসূয়া বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা বন্দর থেকে অবৈধভাবে কালাসকৃত পণ্যের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। উল্লেখিত কনটেইনারের পণ্য বি/ই নং- ৫৭৮৮১৪ এর পন্যের সাথে অপসারণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আমদানিকারক কেমস ফ্যাশন লি: এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট আর এম এসোসিয়েটস এর সাথে আরো কিছু অসাধু ব্যক্তি জড়িত হয়ে চোরাচালানের কাজটি সম্পন্ন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে রাজস্ব ফাঁকি ও চোরাচালানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।