এবার সরকারি ত্রাণের বস্তা থেকে চাল গায়েব
সিলেটে সরকারি ত্রাণের চালের বস্তা থেকে ২-থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত চাল গায়েব হয়ে গেছে। সেই হিসেবে ১৩৩ বস্তা চাল মেপে দেখা গেছে এগুলোয় ২০০ কেজি চাল গায়েব রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে গরিবদের মধ্যে সরকারি ত্রাণের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ত্রাণের চালের প্রতি বস্তা থেকে ২-৪ কেজি করে চাল গায়েবের খবরে তোলপাড় চলছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণ করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে।
জানা গেছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের গরিবদের জন্য কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তুকে চার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩০ কেজি করে ১৩৩ বস্তায় চার টন থাকার কথা। কিন্তু এই ১৩৩ বস্তার বেশির ভাগ বস্তায়ই ২-৩; এমনকি ৪ কেজি পর্যন্ত চাল কম রয়েছে। এতে প্রায় ২০০ কেজি চাল কম রয়েছে এই চার টনের মধ্যে।
১৩ নং ওয়ার্ডের লামাবাজার এলাকায় গরিবদের মধ্যে ২০ কেজি করে চাল দিতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে কাউন্সিলর শান্তনু দত্তের কাছে। পরে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে খবর দেন সন্তু। খবর পেয়ে মেয়র ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিলেটের খাদ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। খাদ্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে চাল মেপে প্রায় ২০০ কেজি চাল কম থাকার প্রমাণ পান। তবে এই চালগুলো কে-বা কারা কোথায় এবং কীভাবে কমিয়েছেন তা এখনই বলতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী বলেন, চালগুলো সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে এসেছে। আসার পর সেগুলো আমাদের গুদামে আর না মেপে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাছে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আজ খবর পেয়ে ১৩ নং ওয়ার্ডে গিয়ে কোনো বস্তায় কিছু কিছু চাল কম পেয়েছি। আবার কিছু বস্তায় চাল ৩০ কেজির থেকে বেশিও আছে।
তিনি বলেন, চালের বস্তাগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে আসতে গেলে অনেক সময় বস্তা ছিঁড়ে কিছু চাল পড়ে যায়। কিন্তু প্রতি বস্তায় কম থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু বলেন, জনগণকে ২০ কেজি করে চাল দিতে গিয়ে যখন হিসাবে গড়মিল দেখা দেয়, তখনই বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়ে। আমি এই কিস্তিতে ১৩৩ বস্তায় ৩০ কেজি করে চার টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু আমি প্রতি বস্তায় ২-৪ কেজি পর্যন্ত কম। আমি সব বস্তা ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে মেপেছি। আমি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সিটি কর্তৃপক্ষ এবং খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা এসেছেন, এবার বিষয়টি তারা দেখবেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, শুধু ১৩ নং ওয়ার্ড নয়, ১৬, ১৭ ও ২০ নং ওয়ার্ডেও বরাদ্দকৃত চালের ব্যাপারে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ যখন কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু আমাকে ফোন করেন তখন আমি বলি- আপনি চাল বিতরণ বন্ধ রাখেন। জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে ফোন করুন, আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি। পরে ঘটনাস্থলে এসে এ বিষয়টির সত্যতা দেখতে পাই। এখন জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখেন এবং এ বিষয়ে কারো হাত থাকলে তাকে যেন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন। কারণ সরকারি ত্রাণের জিনিসগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেই আমরা। সেক্ষেত্রে মাপে কম হলে আমাদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।