মানবতাহীন এক নিষ্ঠুর শাসকের পাল্লায় পড়েছে বাংলাদেশ : আলাল
সরকার প্রথম থেকেই গুয়ার্তুমি করছে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন নিয়ে তারা রাজনীতি করছে। লোক মরে মরুক, কিন্তু ভিন্নমত পোষণকারীদের কৃতিত্ব দেওয়া যাবে না- এ নীতিতে চলছে সরকার।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরিকৃত করোনা ভাইরাসের কিট স্বাস্থ্য অধিদফতর গ্রহণ না করা, সরকারের করোনা মোকাবিলার নানা দিক ও চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির ভূমিকাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার (২৭ এপ্রিল) কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তার মুখ থেকেই শোনা যায় সরকার প্রসঙ্গে উপরের কথাগুলো। মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন DL TV
DL TV: করোনা মোকাবিলায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট গ্রহণ না করা ও সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলুন।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : সরকার প্রথম থেকেই গুয়ার্তুমি করছে। মানুষের জীবন নিয়েও তারা রাজনীতি করছে। লোক মরে মরুক, কিন্তু তাদের থেকে ভিন্নমত পোষণকারীদের কৃতিত্ব দেয়া যাবে না- এই নীতিতে চলছে সরকার। অর্থাৎ মানুষের জীবন নিয়েও তারা রাজনীতি করে। আপনি দেখবেন- জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব বলেছেন যে কিট তৈরি করার প্রথমে সরকারের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছেন এবং তারা অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তারা উপস্থিত হচ্ছেন না। বাংলাদেশের মতো দেশে এরকম একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার একজন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে, আওয়ামী লীগের ভিন্নমত পোষণকারীর পক্ষ থেকে আবিষ্কার হোক সেটা আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারেনা বলেই এই অসহযোগিতা করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে যেখানে দেশের মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন সেখানে সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপ নাই। অথচ এই শাসক দল যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, মানবতার কথা বলে তখন খুব কষ্ট লাগে আমাদের।
একইভাবে ডক্টর ইউনুস তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্নভাবে করোনা ভাইরাসের মধ্যে সাহায্য করছে। কিন্তু কোনও মিডিয়াতে এ নিউজ পাবেন না। দু-একটা সিটি ফটো নিউজ ছাড়া। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে অথবা তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হয়তো বলে দেয়া হয়েছে। তার (ইউনুস) প্রতিষ্ঠানের কোনও মানবিক নিউজ করবা না। একইভাবে বিএনপির মত দেশের সর্ববৃহৎ দল যত পরামর্শই দিক সরকার এদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কী আর বলবো- মানবতাহীন এক নিষ্ঠুর শাসকের পাল্লায় পড়েছে বাংলাদেশ। গত এক যুগ ধরে তার মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদেরকে। এখন আরও বেশি করে দিতে হবে।
DL TV : করোনা ভাইরাসের মধ্যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো খুলে দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত মনে করেন?
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : করোনা ভাইরাসের প্রথম থেকে লক্ষ্য করবেন সরকার যে, আর্থিক কিংবা অন্য যত ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার, সবগুলোই বিত্তবানদের জন্য। যারা ব্যাংকার তারাই গার্মেন্টসের মালিক, যারা ঋণ খেলাপি তারা গার্মেন্টসের মালিক, যারা ব্যাংকের টাকা মেরে ব্যাংকের লাল বাতি জ্বালিয়েছে সে ধরনের অনেকেই আছে ব্যাংকের মালিক, আবার গার্মেন্টসের মালিক। আর সেই লোকগুলোই প্রণোদনা পাচ্ছে। অথচ যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দিন আনে দিন খায় তাদের ঘরে ঘরে যদি সরকার এনআইডি কার্ড পৌঁছে দিতে পারে তাহলে তাদের খাবার পৌঁছে দিতে পারবে না কেন- এটা আমাদের প্রশ্ন? এ সরকার কি শুধু ধনীদের পৃষ্ঠপোষক?
যারা গার্মেন্টসে চাকরি করে তারা নিতান্তই গরিব মানুষ। মাসের বেতনটা না পেলে তাদের পেট চলবে না। সুতরাং তারা জীবনের ঝুঁকি নেবেই। ক্ষুধার কাছে পরাজিত হবেই। এই শ্রমিকদের যদি দুই বা তিন মাসের মজুরি গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলে কি গার্মেন্টস মালিকরা পথে বসে যাবে? একজন মালিকও পথে বসবে না। কিন্তু সেই কাজটি মালিকরা করছে না। আর তাদের সেই পথে নেয়ার কোনও কাজও সরকার করছে না। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো খুলে শুধু যে পোশাক শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে তা নয়, আসা-যাওয়ার মধ্যে তারা যাদের সংস্পর্শে আসবে তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
সরকার শুধু প্রচার-প্রচারণার মধ্যে আছে। মূল কাজে হাত দিচ্ছে না। ডাক্তারদের ধমক দিচ্ছে, নার্সদের ধমক দেয়া হচ্ছে, সাধারণ জনগণকে লকডাউন করে রাখার জন্য ধমক দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা সরকারকে তোষণ করে এবং সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেয় তাদের বেলায় কোনও ধমক নাই। তাদের বেলায় আছে নীরব নীতি।
DL TV : অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। কিন্তু করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় আমরা অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে। এ বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
আলাল : সব জায়গায দৃষ্টির আড়াল রাখা। সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রেখে কোনরকম করে সময় পার করে দেয়া আর কি। এ সরকারের প্রথম থেকেই বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে যেমনটা করেছে, বর্তমানেও করোনা নিয়ে সরকার তাই-ই করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা ভাইরাসের টেস্ট ফার্মেসিতে করারও অনুমোদন দিয়েছে, আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, ভুটানে মৃত্যুর সংখ্যা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলেছে টেস্ট টেস্ট টেস্ট। আর আমাদের এখানে টেস্ট না করে সমস্ত গণমাধ্যমকে লেলিয়ে দিয়েছে হাত ধোন হাত ধোন প্রচারে। মনে হয় হাত ধোয়াই যেন একমাত্র সমাধান।
করোনা রোগীদের সেবাদানকারী ডাক্তাররাও তো এখন হুমকির মুখে। বহু ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছে। তারা এই নতুন আক্রমণে ভীত আছেন, তাদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা এখনও করা হয় নাই। তারা কোথায় থাকবে, কী করবে? তাদের পরিবারদেরকে কে দেখভাল করবে, পুরো বিষয়টাকে একটা প্যাকেজ করার কথা ছিল। যেটা বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিলো একটি জাতীয় ট্রাস্কফোর্স গঠন করা। একটি জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া। এগুলো করা হচ্ছে না।
সরকার এখন যা ইচ্ছা তাই করছে। যে কারণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট নেয়া হয় না। ডক্টর ইউনুসের ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা, দারিদ্র্য মোচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয় না। বারবার দেশ পরিচালনাকারী দল-বিএনপির পরামর্শ নেয়া হয় না। অপরদিকে যারা ত্রাণ চুরি করছে তাদেরকে শোকজ করা হচ্ছে। আর দু-একজন যারা এদিক ওদিক করছে তাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। বাকিদের শুধু শোকজ করা হচ্ছে। কারাদণ্ড দিচ্ছে, কিন্তু তার পরের দিনই জামিন হয়ে যাচ্ছে। তাদের জামিনের জন্য আবার এমপিরাও আদালতে হাজির হচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটি তুঘলকি কারবার চলছে। অনাচার, অবিচার ও জনগণের বিরোধী এরকম একটি সরকার স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেও আর কখনও আসেনি।
DL TV : সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আলাল : আপনাকে ও DL TV পরিবারকেও ধন্যবাদ।