বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসির অপেক্ষায় শিশু জান্নাত

0

আজ ২৭ এপ্রিল। যখন পিতা গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম হত্যার ৬ বছর পূর্তি তখন মেয়ে রওজা আক্তার জান্নাতে’র বয়স প্রায় ৬ বছর। সংসারের এক মাত্র উর্পাজনক্ষম স্বামী হত্যার বিচার প্রার্থী কাঞ্চন নাহার নুপুর মেয়ের লালন পালন ও ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। পিতার হত্যাকারীদের ফাঁসি চায় এই শিশু জান্নাত। বিগত সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও কোন প্রকার সহায়তা পায়নি নিহতের এ পরিবার।
 
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আদালতে যান একটি মামলায় হাজিরা দিতে। হাজিরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে লিংক রোডে উৎ পেতে থাকা র‌্যাব সদস্যরা তাদের অপহরণের পর হত্যা করে শরীরে ইট বেঁধে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দেয়। ঘটনার স্বাক্ষী নষ্ট করতে এ হত্যায়যোগ হয় সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয় জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
 
কোন অপরাধী না হয়েও কাজের প্রয়োজনে গিয়ে গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম হত্যার মাত্র এক মাস সাত দিন পর ৪ জুন জন্ম হয় মেয়ে রওজা আক্তার জান্নাত। হাটি হাটি পা পা করে বেড়ে উঠছে জন্মের আগে বাবার আদর স্নেহ বঞ্চিত জান্নাত। এখন জান্নাতের বয়স প্রায় ছয় বছর। জান্নাত জন্ম হওয়ার ১ মাস ৭ দিন আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে খুন হয় তার বাবা জাহাঙ্গীর। অবুঝ শিশু জান্নাত এখন পরিবারের সদস্যদের কাছে শুনে শুনে বাবার হত্যাকারীদের বিচার চায়।
 
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কাঞ্চন নাহার নুপুর বলেন, স্বামী হত্যার পর দেবরদের সহায়তায় সংসার চলত। মেয়ে বেড়ে উঠার সাথে সাথে সংসার খরচ বাড়তে থাকায় মেয়ের লালন পালন ও ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় ভুগছেন নুপুর। শিশু রেখে গার্মেন্টে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। পরে মেয়র ডা. আইভীর দেয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে চাকরীতেও সংসার চালাতে পারছেন না। স্বামী হত্যার বিচার ও মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিগত সময়ের নানা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান কাঞ্চন নাহার নুপুর।
 
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের মা মেহেরুন নেছা ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, বাবা হত্যার শিকার আর মা সন্তানের খাবার জোগারের জন্য কর্মস্থলে থাকায় দাদির কোলে পিঠে চড়েই বড় হচ্ছে জান্নাত। ছেলের বউ কর্মস্থলে চলে যাওয়ার পর শিশু জান্নাতকে মাদ্রাসায় আনা নেয়াসহ সামাল দিয়ে ঠিকমত সংসারের কাজকর্ম করতে পারেন না নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বৃদ্ধ মা। শেষ বসয়ে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান তিনি। 
 
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের ভাই সাজু জানান, সংসারের প্রয়োজনে প্রথমে গার্মেন্টে ও পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কাজ নেয় নুপুর। এ কারণে অবুঝ শিশুকে রেখে যেতে হয় বৃদ্ধ শাশুড়িসহ স্বজনদের কাছে। কাছে পাওয়া বড় চাচাকেই এখন বাবা বলে ডাকে শিশু জান্নাত। আবদারও করেন অনেক কিছু। যতটুকু সম্ভব রক্ষা করে। নিহতের ভাই হত্যাকারীদের ফাঁসি আর জান্নাতের ভবিষ্যতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান।
 
এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে জাহাঙ্গীর আলম নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালকের কাজ নেয়। এ অসহায় পরিবার ও অবুঝ শিশুর ভবিষ্যতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই ও হত্যার শিকার সচ্ছল পরিবারের সদস্যরাও।
 
২০১৭ সালে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলোচিত ৭ খুন মামলার রায় হয়। রায়ে প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসি ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে হাই কোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com