কাঁচাবাজারের ছাদে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তে ড্যাবের ক্ষোভ
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য সরকার মহাখালী ডিএনসিসির কাঁচাবাজারের ছাদে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আজ সারা বিশ্বে তা ভাইরাল। বিষয়টিকে অসম্মানজনক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে রোববার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করার পর থেকেই সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাসেবা প্রদান করে বিশ্বের আনেক দেশে জাতীয় বীর, বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্মানিত হচ্ছেন।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যতীত সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ৩৭১ জন চিকিৎসকসহ ছয় শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসুলভ পরিপত্র জারি করছে। সরকার সর্বশেষ মহাখালী ডিএনসিসির কাঁচাবাজারের ছাদে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্মানজনক এই পেশাকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করেছেন। তাছাড়া বাস্তবিকভাবেই ইতোমধ্যে যেখানে চিকিৎসকসহ প্রায় ছয় শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় সংক্রমিত, সেখানে একটি মার্কেটের ছাদে হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা কালক্ষেপণ ছাড়া কিছুই নয়। করোনা চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ও আইসিইউ অপরিহার্য যা উল্লেখিত অবকাঠামোতে অসম্ভব। সুতরাং সরকারের এই সিদ্ধান্ত অপরিপক্ব, অপরিকল্পিত এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় অকাল মত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াস।’
সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এমন অসম্মানজনক, দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসকরা স্বল্প সুযোগ-সুবিধায়, ন্যূনতম ব্যক্তিগত সুরক্ষায় যেভাবে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিরলসভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন এ অবস্থায় তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।’
তারা বলেন, ‘করোনা যুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ও আইসিইউ সম্পন্ন ঢাকার কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করা উচিত। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল অপ্রতুল। সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমরা করোনার ভয়াবহ ছোবলের দ্বারপ্রান্তে। এমতাবস্থায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে এমন অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক হঠকারী সিদ্ধান্ত পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলবে।’
তারা অনতিবিলম্বে সরকারকে এ সিদ্ধান্তে পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সমৃদ্ধ ও আইসিইউ সম্পন্ন ঢাকার কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ডেডিকেটেড করার জোর দাদি জানিয়েছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি অবমাননামূলক যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।