ভিডিও কনফারেন্সে সক্রিয় বিএনপি নেতারা, হচ্ছে সিদ্ধান্তও
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সময় কাটছে ভিডিও কনফারেন্সে। ফোন আর ভিডিওকলে তারা যোগাযোগ রাখছেন নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নেতারা ভার্চুয়াল এ উপায়েই নিচ্ছেন দলীয় সিদ্ধান্ত। এমনকি দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে, তা-ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা তদারকি করছেন অনলাইন মাধ্যমে।
দলীয় সূত্র জানায়, করোনার কারণে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আছেন তার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবল চিকিৎসকরা প্রবেশ করতে পারছেন তার বাসায়। অন্য কারও সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। সেখানে তার সঙ্গে আছেন বোনসহ স্বজনরা।
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান আগে থেকেই দলীয় যোগাযোগ রাখছেন স্কাইপি বা অন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে। করোনার এই সময়েও তিনি শীর্ষ নেতাদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা-পরামর্শ দিচ্ছেন একইভাবে।
দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে দেখা গেছে। তারপর বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হয়ে। অবশ্য গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
বিএনপির অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবদিকে যোগাযোগ রাখছেন ভার্চুয়ালি। এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, স্বজনদের খোঁজখবরও তারা রাখছেন এ উপায়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে। সামর্থ্য যেটুকু আছে মানুষকে সাহায্য করছি। এছাড়া টেলিফোনে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। বাকি সময় টেলিভিশন, পত্রিকা দেখে পার করছি। স্থায়ী কমিটির মিটিং এখন আর হচ্ছে না, তবে সবার সাথে ভিডিওকলে কথা হচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড নয়। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মানুষের এ কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আমাদের যে সামান্যটুকু ক্ষমতা আছে এটুকু যেন মানুষের উপকারে আসে সে কাজেই আমরা সময়টা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বাসা থেকে বের হতে পারছি না। কাজগুলো করতে হচ্ছে কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে। গ্রামের বাড়িতে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা দুটি কাজ করছেন। একটা হলো, মানুষকে সচেতন করা। অন্যটি ঘরে বসে চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান ইত্যাদি সামগ্রী প্যাকেটজাত করে চুপচাপ তালিকা দেখে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন (বর্তমানে স্থগিত) ঘিরে নিজ এলাকা চট্টগ্রাম আসার পর আর ঢাকায় ফেরা হয়নি। এ সময় বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ত্রাণ বিতরণের কাজগুলো করছে। ড্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন সেবার কাজগুলো করছে। আমার সেটা স্কাইপিতে বসে তদারকি করছি এবং নির্দেশনা দিচ্ছি। পাঁচ লক্ষ পরিবারকে ইতোমধ্যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দেয়া হবে। যদিও আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, আমরা তো আর সরকারে নেই, আর সরকারি দলও না।
তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে, তবে সেটা অনলাইন প্লাটফর্মে। দেশের কোথায় কী অবস্থা, কী করলে মানুষের উপকার হবে এসব বিষয়ে। এতে একটা কাজ হয়েছে, সবসময় যে একসাথে বসার দরকার নেই, টেকনোলজি আমাদের সেটা শিখিয়েছে।