‘মহাদুযোর্গ’ মোকাবিলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের দাবি বিএনপির
মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মহাদুযোর্গ’ মোকাবিলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘চতুর্দিকে অন্ধকার ও হতাশা। করোনা দুযোর্গের নানামুখি প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার জন্যে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব আমরা করছি।’
ফখরুল বলেন, ‘এই টাস্কফোর্সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সশ্বস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করে এই টাস্ক ফোর্সকে অর্থবহ ও গতিশীল করার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং সেই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের জয়ী হতে হবে।’
টাস্কফোর্স গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি টাস্কফোর্স গঠন করলে সুসমন্বিত, সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। নোভেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায়- ‘কোনও খাদ্যের ঘাটতি নয়, খাদ্য বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সুশাসনের অভাব দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে’।’
তিনি বলেন, ‘তাই এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বণ্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’
চলমান কারোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকারভিত্তিক বিষয়গুলো কী হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবার আগে এখন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং টেস্ট টেস্ট টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়াটা সবার আগে। যাদেরকে আইসোলেশনে নেয়া হচ্ছে এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা সমস্যা দেখা দিয়েছে যারা দিন আনে দিন খায়, দিনমজুর। যাদেরকে বলা হচ্ছে যে, ‘ঘরে থাকো’। কিন্তু ঘরে থাকলে তো ওদের খাওয়া আসছে না।’
এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘এদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো, তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত, টপ অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন। এটার জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী। তারা স্থানীয় যে প্রশাসন আছে, জনপ্রতিনিধি আছে, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলো আছে তাদের নিয়ে এই কাজটা সহজে করা যেতে পারে। অতীতে দু-একবার এই কাজগুলো হয়েছে তাদেরকে নিয়ে। তাদের (সামরিক বাহিনী) সাংগঠনিক যে দক্ষতা, তারা চুরি-টুরির মধ্যে থাকবে না। এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট বা বাম মোর্চার ঐক্যের একটি পরামর্শ সভায়ও আমি যুক্ত হয়েছিলাম। আমরা কোনও রকমের সংকীর্ণতায় ভুগতে চাই না। আমরা মনে করি যে, এখন জাতীয় ঐক্যটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘কিভাবে আহজারি করছে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা, কীভাবে আহজারি করছে গৃহকর্মীরা। এরা অত্যন্ত দুঃস্থ হয়ে গেছে, এখন এদের হাতে কাজ নেই। যে বস্তিতে তারা থাকে সেখানে ঘর ভাড়া দেয়ার উপায় নেই, সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদও করা হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গ্রামের দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, যারা রিকশা চালায়, ঠেলাগাড়ি চালায় ওদের সংখ্যা তো ৩ কোটি প্রায়। এই লোকজনদের কথা চিন্তা করতে হবে। এই যে ফেরি করতো হকার, বাজারে আসতো- এসবও কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে…..।”
‘বিএনপির কর্মকাণ্ড’ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি, আমরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি, তাদেরকে মাস্ক দিয়েছি। দুর্ভাগ্য আমাদের, তথ্যমন্ত্রী সাহেব সেগুলো দেখতে পান না। তিনি বারবার বলে যাচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগের লোকেরাও বলে যাচ্ছে যে, আমরা কিছু না কাজ করেই শুধু কথাই বলছি। এটা একেবারেই সত্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সারা দেশে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৪ মার্চ দলের নেতা-কর্মীদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, নিজেকে নিরাপদ রেখে দুঃস্থ এবং দুদর্শাগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকটা জেলা, উপজেলায় আমাদের দল, সহযোগী সংগঠন, অঙ্গসংগঠনসমূহ কাজ করছে। যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে সর্বক্ষণ।’
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, সর্বশক্তি নিয়ে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি, জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো, ইনশাল্লাহ্। নিজেদের ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক ভুলগুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার জন্য বিএনপির সমালোচনায় ব্যস্ত সরকার।’