চলমান পরিস্থিতিতে আড়াই লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে জামায়াত
চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম সম্পর্কে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান দেশবাসীর উদ্দেশে ১৩ এপ্রিল যে বক্তব্য রাখেন তার সার-সংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
গোটা বিশ্ব আজ চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশও এ সংকটে নিপতিত। শুরুতেই আমরা সরকারকে সতর্ক করেছিলাম এবং জনগণকে সার্বিক করণীয় ব্যাপারে সতর্ক করে লিফলেট ছাপিয়ে আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার সময় মত পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে আমরা শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হইনি, জনগণের পাশে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করেছি। মানবতার ডাকে আমাদের কর্মীরা সাড়া দিয়েছেন ও অনবরত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদের কর্মীরা খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য জরুরি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণা নয়, মানবতাবোধকেই আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কাজ করেছে আমি তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯২টি পরিবারের মধ্যে চাল-১ হাজার ৭৭৯ টন, ডাল-২৮৭ টন, লবণ-১৯৬ টন, আলু-৫৪৮ টন, পেঁয়াজ-২২৭ টন, তেল-৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৪ লিটার, আটা-৬৮ টন, মাস্ক-২ লাশ ২৩ হাজার ৪২৩টি, সাবান-৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৭০টি এবং পিপিই-২ হাজার ৮০০টি বিতরণ করা হয়েছে।
আমাদের মেডিক্যাল টীম জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি জাতির এই মহা দুর্যোগকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যেখানে সরকারের ভূমিকা রাখার দরকার ছিল, সেখানে সরকারি দলের অনেকে গরীবের চাল আত্মসাৎ করার দুঃখজনক ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন জনগণের হাজার হাজার কেজি চাল আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
জাতির এই দুর্যোগকালে সরকার বিভিন্ন খাতে তিন পর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। অন্যান্য দেশের সরকারগুলো যেখানে জনগণকে সাহায্য করছে, সেখানে আমাদের সরকার ঋণ হিসেবে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ।
জিডিপিতে কৃষির অবদান সবচেয়ে বেশি। কৃষিতে সরকারের প্রণোদনা মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা। এটি কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা করার আহ্বান জানাচ্ছি। রেমিটেন্স যোদ্ধা খ্যাত প্রবাসীদের দুঃখ-দুর্দশাকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে তা সমাধানের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের কল্যাণে সন্তোষজনক প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে। প্রণোদনার টাকা যাতে কোটারি স্বার্থবাদীরা লুটেপুটে খেতে না পারে সেই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্বল্প মূল্যের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের যে কর্মসূচি সরকার নিয়েছেন তা ইতোমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে। চাল আত্মসাতের ঘটনা গোটা জাতিকে হতবাক করেছে। যেহেতু সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে, তাই সেনাবাহিনীকে এ কাজে লাগানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া দিবেন।
করোনাভাইরাসের কারণে বহু লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। আগামি ৬ মাস পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে তাদেরকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন প্রাইভেট সেবা খাতে যারা চাকরি করতেন, তাদেরকে তিন মাসের বেতন দেয়ার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল জেলা কেন্দ্রে ভাইরাস পরীক্ষার কীট সরবরাহ করতে হবে এবং পরীক্ষা পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা উপযোগী করতে হবে। পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটারের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভাব্য আর্থিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। আমরা বারবার জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া লক্ষ্য করছি না। বিলম্ব না করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিস্থিতি সন্তোষজনকভাবে কাটিয়ে না উঠা পর্যন্ত মিল, ফ্যাক্টরি ও ইন্ডাস্ট্রি খুলে দেয়া যাবে না। জাতি বেঁচে থাকলে শিল্প বেঁচে থাকবে। কাজেই সর্বাগ্রে মানুষ বাঁচানোর জন্য গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা বিত্তবান নাগরিক ও রাজনৈতিক দলসমূহকে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সামনে রমযান। রোযাদার মানুষগুলো যাতে স্বস্তির সাথে রোযা রাখতে পারেন, তার জন্য সকল দল-মতের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীদের দিকে তীর্যক খেয়াল রাখতে হবে। বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি বিপদ, মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। কেবল আল্লাহই তা দূর করতে পারেন। অনাচার, অশ্লীলতা, জুলুম-নির্যাতনের সীমা লংঘিত হলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে আবার ন্যায্য জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহ একটি অবকাশ দেন। এ জন্য আল্লাহর কাছে বুদ্ধিমান ও ঈমানদার লোকেরা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ক্ষমা চান। আমরা দেশবাসীকে আত্ম-পর্যালোচনা করে আল্লাহর কাছে আত্ম-সমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে আত্ম-সমর্পণ করে ক্ষমা চাইতে হবে।
আমরা সকলে মিলে অঙ্গীকার করব, আমরা যেন কোনো অন্যায়-অপকর্ম-অপরাধের সাথে জড়িত না হই। ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো অত্যাচার-জুলুম না করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই। যদি ইনসাফের ওপর দেশ পরিচালনার অঙ্গীকার করা যায়, মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে দৃঢ়তার সাথে আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিপদ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদের প্রিয় দেশবাসীর সহায় হোন। বিশ্বাবাসীর সহায় হোন। সমগ্র মানবজাতিকে আল্লাহ তায়ালা হেফাযত করুন। -বিজ্ঞপ্তি