আত্মাসাৎ ও লুটপাটে দেশে ত্রাণের হাহাকার চলছে: রিজভী
ক্ষমতাসীনদের আত্মাসাৎ ও লুটপাটের কারণে সারা দেশে ত্রাণ নিয়ে হাহাকার চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীতে ‘ফিউচার অব বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার এক কর্মসূচির উদ্বোধনে তিনি এ অভিযোগ করে। রাজারবাগে ইস্টার্ন পয়েন্টের কাছে একটি বাসার সামনে এ উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়।
ফয়সাল সালামের নেতৃত্বাধীন এই সংগঠনটি সারা দেশের বিভাগীয় পর্য়ায়ে দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে। পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কয়েকজনের মাঝে ত্রাণ দেন রিজভী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফিউচার অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শওকত আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজেদ বিন হাসান, কে জি সেলিম, সদস্য নাহিদ রহমান পুতুল, রবিকুল হাবিব প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে সরকারি যে ত্রাণ, এই ত্রাণ আত্মাসাৎ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাদের দ্বারা? এই সরকারি দলের লোকদের দ্বারা। হাহাকার করছে খুলনার রেল স্টেশনের শ্রমিকরা একটু ত্রাণের জন্য। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নার্সরা খাবার পাচ্ছে না। অথচ ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের বাড়িতে চাল বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। কার চাল? জনগণের চাল। তাদের টাকায় কেনা চাল।’
সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যখন সকল মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই মহামারি মোকাবিলা করতে হবে, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি- সরকার একগুয়েমি করছে। একতরফাভাবে কাজ করতে গিয়ে শুধু নিজের দলের লোকজনদের পেট ভরানোর কাজটা গত ১০ বছর ধরে যেভাবে করেছে এখনও সেটাই করছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘যখন মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকছে, মানুষ একটু খাবারের জন্য হাহাকার করছে, রেল স্টেশন, পথে-ঘাটে একটু ত্রাণের আশায় মানুষ দিনের পর দিন গ্রীষ্মের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ত্রাণ পাচ্ছে না, তখন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ লুটপাটের উৎসবে মেতেছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমরা এখনও বলছি যে, জনগণের এই দুর্দশা লাঘব করার জন্য সকলকে একসাথে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যারা সরকারে আছেন তাদের প্রধান দায়িত্ব এই কাজটা করার। অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী তারা নানা কথাই বলছেন। দাবি করছেন- ‘ত্রাণ চুরি হচ্ছে না, চাল চুরি হচ্ছে না। আমরা ঠিক মতোই দিচ্ছি’- ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিদিনই আপনারা গণমাধ্যমের দিকে চোখ রাখলেই দেখবেন- শুধুমাত্র চাল চুরির ঘটনা,শুধুমাত্র ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনা। আর ওদিকে রাস্তার ওপর হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে একটু ত্রাণের আশায়। দুঃস্থ জনতা হাহাকার করছে।’
করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এখনও নেই দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দেখছি, স্বাস্থ্যকর্মী যারা ডাক্তার তাদেরকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে? বিভিন্ন অজুহাত তুলে এই ছাঁটাই করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অথচ ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিধান করছেন না, নার্সদের নিরাপত্তা বিধান করছেন না। তারা খেতে পারছেন না। আপনি আপনার একনায়কতন্ত্রের যে আচরণ, সেই আচরণটা অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে বিশ্বব্যাপী এই মহামারির তাণ্ডব,প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’
রিজভী বলেন, ‘এখনও সময় আছে, সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আশা করি, ঐক্যবদ্ধভাবে যাতে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, দুঃস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি যাতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া যায় সেই ব্যবস্থাটাই গ্রহণ করবে সরকার।’
এসময় তিনি ফিউচার অব বাংলাদেশ-এর এই মহতী উদ্যোগের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।