স্কাইপে সর্বদলীয় সভা: ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ ও ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি উত্থাপিত

0

নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ এবং ‘জাতীয় দুযোর্গ’ ঘোষণা দাবি উঠেছে ‘সর্বদলীয় পরাশর্ক সভায়’। গতকাল সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে এই ‘সর্বদলীয় পরাশর্ক সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা স্কাইপের মাধ্যমে এই পরামর্শসভায় অংশ গ্রহণ করেন।

এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, বাসদের খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের প্রধান টিপু বিশ্বাস প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।  

স্কাইপেতে আরও যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাম ঐক্য জোটের আহবায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির (মাকর্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান জোনায়েদ সাকি, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপাতি এম এ সবুর।   

সেগুন বাগিচার রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় ভবনের পঞ্চমতলায় এই পরামর্শসভা হয়।

সভার সূচনা বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ করোনাভাইরাস সংক্রামণকে জাতীয় দুযোর্গ ঘোষণা করে তা মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহনের কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুবকসহ সামাজিক শক্তি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, চিকিতসক, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞদের ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহনের জন্য। সকলের আকাংখার অংশ হিসেবেই সমন্বিত উদ্যোগের লক্ষ্যে আজকেরে এই সভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আজকে এখানে আমাদের সাথে স্কাইপে যুক্ত হয়েছেন। তারা ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে ভুমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।’

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমি সমর্থন করি। জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের এই করোনা ভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলা করতে হবে। এককভাবে এটা সম্ভব না। সম্মিলিতভাবে করতে হলে মতবিনিয়ম করা, ঐক্যমত গঠন করা এবং সারা জাতিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’

‘এখানে কোনও সংকীর্ণ চিন্তা না করে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হবে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। সকলকে নিয়ে এটা করা সম্ভব। এককভাবে কোনো দল বা কোনো সংগঠন পারবে না। আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সকল শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।’

বিএনপি মজসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রামণের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ থেকে সচেতনভাবে কাজ করছি, ভেতরের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার সেগুলোকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি। আজকে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে-এটা একেবারেই খুবই অপ্রতুল। একটা জেনেছি যে, ৪০ হাজার লোকের মধ্যে মাত্র ৩‘শ লোকের মধ্যে দেন এবং সেটাও দলীয়করণ করা হয়েছে পুরোপুরিভাবে।’

‘এগুলো থেকে উর্ধ্বে উঠতে না পারলে এই করোনা ভাইরাস মোকাবিলা কোনোভাবে সম্ভব না। সবচেয়ে ভয়াবহ দিন আসছে সামনের দিনগুলোতে। আপনারা সবাই একমত হবেন আমরা সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমকে সামনে রেখে, সততাকে সামনে রেখে যদি হ্যান্ডেল করা না যায় তাহলে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বো, অনেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছেন।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বির্ক মহাদুযোর্গ মোকাবিলায় যেকোনও উদ্যোগে শামীল হতে আমরা প্রস্তুত আছি। এই দুযোর্গ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে অবশ্যই সরকারকেই। কারণ পুরো দায়িত্বটার সরকারের। তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অবহেলা এবং আমি জানি না তারা এটাকে নেগলেট করেছেন কী কারণে যার ফলে অনেক বড় সমস্যায় পড়েছি।’

‘আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর রহমতে এই মহাদুযোর্গ মোকাবিল করতে সক্ষম হবো।’

করোনা ভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী দলীয় পরিকল্পনা তুলে ধরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। দলের প্রস্তাবনার একটি কপিও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন তিনি।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় দুযোর্গ কমিটি গঠন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে, সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে, ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে, সকল সামাজিক শক্তিসহ সব পেশার মানুষকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

‘একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দুযোর্গ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি আরও সৃষ্টি হবে। আমি অনুরোধ করবো- সরকারসহ সকল মহলকে আসুন আমরা জাতিগতভাবে একত্রিত হই এবং জাতীয় এই মহাদুযোর্গ মোকাবিলা করি। আমি মনে করি, এখনো সময় আছে সকলকে একত্রিত করার।’

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই মহাদুযোর্গ একার পক্ষে নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এটা করতে হবে। আমি এখনও আহবান জানাব সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার। সরকারি যন্ত্র-রাষ্ট্রীয় যন্ত্রসহ সবাই নিয়ে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার। একাত্তরে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলাও আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় এই পরামর্শ সভায় সিপিবির আবদুল্লাহ কাফী রতন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির আকবর খান, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com