ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিতে সরকারকে আইনি নোটিশ
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ছুটির মধ্যে সারা দেশে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দিনমুজুর ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১১ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান ই-মেইলের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশ প্রসঙ্গে আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে গণমাধ্যমে অনেক অনিয়মের খবর এসেছে। অনেক জনপ্রতিনিধি ত্রাণ সহায়তার চালসহ বিভিন্ন ব্যাপারে অনিয়ম করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। তাই এ ধরনের অনিয়ম রোধে এবং সবার হাতে ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কাজ পরিচালনার জন্য এ নোটিশ দিয়েছি।’
নোটিশে পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এই মুহূর্তে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার লজ্জায় মুখ ফুটে সাহায্য চাইতে পারছে না। এসব পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ওষুধের অভাব কিংবা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টিভি মিডিয়া এবং সোস্যাল মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত নানা খবর প্রকাশ পেয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নিকট খাদ্য ও ওষুধসামগ্রী পৌঁছে দেয়া। দেশে খাদ্যসঙ্কট নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও যথাযথভাবে খাদ্যের সরবরাহ এবং বিতরণ নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ইতোপূর্বে নানা দুর্যোগে সেনাবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে সরকারকে সহায়তা করেছে এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম, নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক চাল চুরি ও মজুদ এবং সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এ পর্যায়ে একমাত্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই এই ত্রাণ বিতরণ এবং সরবরাহের কাজ যথাযথভাবে পরিচালনা সম্ভব।
তাই জনমনে আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা দূর করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তাদের নিকট খাদ্য ও ওষুধ সামগ্রী পৌঁছানোর দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম এ ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আগের দিনগুলোর তুলনায় গত ৪-৫ দিনে আক্রান্তের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে মৃত্যুর হারও। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮২ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। তবে বেশ কয়েকদিন পর আক্রান্তদের মধ্যে ৩ জন সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এরইমধ্যে করোনার বিস্তার রোধে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। সব ধরনের কর্মস্থল ও যাতায়াত-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনমুজুর, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও সহায়-সম্বলহীন মানুষদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারি বরাদ্দের এসব খাদ্যসামগ্রী ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের যোগসাজশে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।