১০ টাকার চাল পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত
মহামারি করোনা ভাইরাসে কর্মহীন মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কুড়িগ্রামের রাজারহাটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে। তবে সে চাল পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকাধরা যা খাওয়ার অনুপযোগী বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। অনেকেই এসব চাল ফেরত দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এমনকি পুলিশে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছেন ডিলাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ জন ডিলারের মাধ্যমে ৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে ১১ হাজার ৮২৭ জন কার্ডধারীদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়। উপকারভোগীরা এই চাল ১০ টাকা কেজি দরে কিনতে এসে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সুবিধাভোগীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কিনতে ৩০ কেজির বস্তা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু যাদের অর্থ সংকট তারা বস্তা কিনতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এছাড়া অতি কষ্টে উপার্জন করা ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর বস্তা খুলে দীর্ঘ দিনের পুরাতন, পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকা ধরা নষ্ট চাল পাচ্ছেন।
অভিযোগ পেয়ে ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের চায়না বাজার, শরিষাবাড়ীহাট, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বাজার, রাজারহাট বাজারের সোনালী ব্যাংক চত্বর, ছিনাই ইউনিয়নের চাঁন্দের বাজার স্পটে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় সুবিধাভোগীদের লাইনে-বেলাইনে চাল সংগ্রহ করতে দেখা যায়। অনেক স্থানেই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। চাল সংগ্রহ করার পর উপকারভোগীরা চাল নিয়ে বাড়িতে গিয়ে নষ্ট চাল দেখে ফেরত নিয়ে আসলে ডিলাররা উল্টো পুলিশে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে অসহায় দুঃস্থ উপকারভোগীরা পচা, নষ্ট চালই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বাজারের স্পটে মনশ্বর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম নামের এক উপকারভোগী চাল উত্তোলন করার পর পচা, দুর্গন্ধযুক্ত ও পোকাধরা খারাপ চাল পাওয়ায় বেলা ১১টা থেকে ডিলার মফিজুল ইসলামকে চাল ফেরত নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ফেরত না নিয়ে উল্টো পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন ডিলার।
মন্দির গ্রামের বাবলু মিয়া সকাল সাড়ে ৯টায় চাল উত্তোলন করে পচা চাল পাওয়ায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পাল্টানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রতারিত ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ডিলারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন তারা।
এ বিষয়ে ডিলার মোজাফ্ফর অভিযোগ করে বলেন, চাল তো উপজেলা খাদ্য গুদাম সরবরাহ করেছে, তারাই এ রকম বস্তা দিয়েছে। ফেরত না নিলে তখন আমার বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আব্দুল আউয়াল বলেন, পচা চাল যাওয়ার কথা নয়। তবে দু’চারটা চালের বস্তা গুদামের একেবারে নিচ থেকে চলে যেতে পারে। গেট পার হওয়ার পর আমার দায়িত্ব নেই।
উপজেলা খাদ্য কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।