কলোরকুইন কূটনীতি : ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির কাছে ভারতের নতি স্বীকার
‘আমেরিকাকে আবার মহান বানানোর’ প্রয়াসে আরেকটি জয় পেলেন ট্রাম্প। ভারত যদি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ওপর থেকে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তবে দেশটির বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ গ্রহণ করা হবে বলে অনির্দিষ্ট হুমকি দিয়ে এই সাফল্য পেলেন তিনি। এতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রাম্পের দেশের ‘জুনিয়র পার্টনারের’ ওপর চাপ প্রয়োগের সফলতা প্রমাণিত হলো।
ট্রাম্প মনে করেন, এই ওষুধেই আছে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির পথ। আর ভারত সম্ভাবনাময় ওই ওষুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ট্রাম্পের সামনে দুটি পথ খোলা ছিল : একটি হলো জীবন রক্ষার জন্য দেশের অর্থনীতিকে বন্ধ অব্যাহত রাখা কিংবা জনসাধারণের সুরক্ষার বিনিময়ে অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে খুলে দেয়া।
ভারত তার দেশের লোকজনকে রক্ষার জন্য ওই ওষুধটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প যখন তার নিজের জনগণের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধটির সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইলেন, তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
ভারতের নতুন সম্রাটের সাথে সাক্ষাত
মোদির কাছে ট্রাম্প অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভারত এই আশ্চর্য ওষুধটি বিক্রি করবে না বলে খবর প্রচারিত হওয়ার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন যে এই সিদ্ধান্ত আমি পছন্দ করছি না। আমি জানি, ভারত অনেক দেশের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কিন্তু আমেরিকার বিষয়টি অন্য। ভারত অনেক বছর ধরে আমেরিকার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। যদি ভারত বিক্রি না করে, তবে ঠিক আছে। তবে প্রতিশোধ আসতেই পারে। কেন আসবে না?
এর এক দিনের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সাংবাদিকদের জানালেন যে তার দেশ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয়েছে, এমন কিছু দেশে আমরা এই অত্যাবশকীয় ওষুধটি পাঠাচ্ছি।
অর্থাৎ ভারতের বহু মেরুর ‘ডিপ স্টেট’ লড়াই না করেই পরাজয় স্বীকার করে নিলো।
ভারত নিজেকে ‘পরাশক্তি’ গোছের কিছু মনে করে। কিন্তু বাস্তবে সে ‘অতি গরিব’। ভারত গরিব উভয় অর্থে – দেশটির লোকজন ভয়াবহ মাত্রার গরিবি জীবনযাপন করে এবং বিশ্বের সত্যিকারের পরাশক্তিগুলোর কোনো একটি তথা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চাপ এলে সে নতি স্বীকার করে।
আসলে ‘সম্রাটের’ দাবির কাছে ভারত নতি স্বীকার করে ওষুধটির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে, তাই ছিল স্বাভাবিক বিষয়। এর আগে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দাস হওয়ার সময়ই ভারত কার্যত আত্মসমর্পণ করে ফেলেছিল। এবার ওষুধ রফতানির দাবিটি মেনে নেয়ার কারণ ছিল চীন থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে ইচ্ছুক পাশ্চাত্যের কোম্পানিগুলো যাতে ভারতে চলে আসে এবং চীনকে সংযত রাখার জন্য আমেরিকান সামরিক সমর্থন যাতে অব্যাহত থাকে, তা নিশ্চিত করা।
এক্ষেত্রে ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কথাটি বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্র সিএএটিএসএ অবরোধ আরোপের হুমকির মধ্যেও ভারত অস্ত্রটি ক্রয় করে। এতে মনে হতে থাকে যে ভারত ‘বহু মিত্রতা’ অনুসরণ করছে। আসলে তা নয়। যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে যে চীনকে ‘সংযত’ করতে ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন।
ভারত কেন ছাড় দিলো?
ভারতের বহু মেরুর ‘ডিপ স্টেট’ আসলে কোনো কাজের নয়। ট্রাম্প মাত্র কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেই তাদেরকে হারিয়ে দিয়েছেন।
আসলে ভূরাজনীতির সমীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সম্রাটের’ দাসে পরিণত হয়ে গেছে ভারত। আর এক কারণেই ভারত তার দেশের লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আছে কিনা তা নিশ্চিত না করেই রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ভারত যদি সত্যিই ওষুধটি দিতে না চাইত, তবে ট্রাম্প আসলেই কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন, তা এখনই বলা মুস্কিল। তবে এর মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ভারত সরকার তার দেশের জনগণের চেয়ে আমেরিকার প্রতি বেশি অনুগত। ভারত তার নিজের দেশের লোকদের চেয়ে আমেরিকানদের রক্ষার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিলো।