করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির যত্ন নিবেন কীভাবে
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করায় অনেকের আত্মীয় অথবা পরিবারের সদস্য এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তিকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। বাড়ির মধ্যে যতটা সম্ভব করোনভাইরাস লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের পৃথক রাখা হলো প্রথম পদক্ষেপ। যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে অন্য ব্যক্তিদের থেকে সর্বোচ্চ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস উল্লেখ করেন যে, জনবহুল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ‘এ কারণেই আমরা বলি যে আমাদের সহজ কোনো সমাধান নেই।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে খোলা জানালা এবং খোলা দরজাসহ একটি ভালো বায়ু চলাচলযুক্ত একক ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি আলাদা জায়গায় থাকবে। বাথরুম এবং রান্নাঘরগুলোও খুব ভালোভাবে বায়ু চলাচল উপযোগী হওয়া উচিত। বাড়ির অন্য সদস্যদের আলাদা ঘরে থাকতে হবে, যদি এটি সম্ভব না হয় তবে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং একটি পৃথক বিছানায় ঘুমাতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিবারের সুস্থ ব্যক্তিকে যত্নশীল ভূমিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে লক্ষণমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্য রোগীর সাথে দেখা না করার কথা বলেছে। চিকিৎসকের রোগীর সাথে যোগাযোগের পর প্রত্যেকবার হাত ধোয়া উচিত। পাশাপাশি খাবার প্রস্তুত করার আগে, খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহারের পরে এবং হাত নোংরা হলে সাথে সাথে ধোয়া উচিত।
হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। এতে করে নিজে এবং আশপাশের মানুষ করোনা বা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকবে। অবশ্যই টিস্যু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যত্রতত্র ফেললে ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। এটা না থাকলে পরিষ্কার কাপড়ের তোয়ালে ব্যবহার করা এবং এগুলো বার বার পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অসুস্থ ব্যক্তি এবং নার্স উভয়েরই মাস্ক পরা উচিত।
অসুস্থ ব্যক্তির পৃথক কাপ, প্লেট, তোয়ালে এবং বিছানার লিনেন ব্যবহার করা উচিত। এবং এসব জিনিস সাবান এবং পানি ব্যবহার করে আলাদাভাবে ধুয়ে নেয়া উচিত। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারবেন, তবে বাচ্চার কাছাকাছি থাকলে মাস্ক পরা উচিত বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তির বিছানায় বিশ্রাম নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কিছু লোকের ক্ষেত্রে ভাইরাসটির কেবলমাত্র হালকা লক্ষণ থাকবে। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়াও হতে পারে। কারও যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নেয়া উচিত।
পরিবার থেকে পৃথক থাকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে জ্বর, কাশি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার যত্ন নেয়া উচিত এবং তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। কোভিড-১৯ সংক্রমিত লোকের যখন হাঁচি বা কাশি হয় তখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য বাড়ির মধ্যে পৃথক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির কোনো ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়ার পরে পরিবারের অন্য কারও সাথে যোগাযোগ এড়ানো জরুরি।
কমিউনিটি গ্রুপ
অনেক দেশে অনলাইন বিতরণ পরিষেবাগুলো পৃথক থাকা ব্যক্তিদের জন্য খাদ্য সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যারা করোনভাইরাসজনিত কারণে বাইরে যেতে পারেন না তাদের কাছে খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করার জন্য কমিউনিটি গ্রুপও গঠন করেছে। কোনো ব্যক্তির কোভিড-১৯ রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো পরীক্ষা। দক্ষিণ কোরিয়া গণপরীক্ষার ফলে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়াই মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে পেরেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত লোকদের পৃথক রাখার জন্য প্রতিটি দেশের নিজস্ব সমাধান প্রয়োজন। ‘প্রয়োজনীয়তাই আবিষ্কারের কারণ।’
বর্তমান অবস্থা কী?
মঙ্গলবার করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে পাঁচজনের মৃত্যু হওয়ায় এ সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মোট ১৬৪ জন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৬৯৭।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৬ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ জন চিকিৎসাধীন এবং ৪৭ হাজার ২৫৬ জন (৫ শতাংশ) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৫ জন (৭৯ শতাংশ) সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং ৭৪ হাজার ৬৯৭ জন (২১ শতাংশ) রোগী মারা গেছেন।