‘করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা বেশি ভয়ঙ্কর’

0

ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে ভিক্ষা করতে প্রতিদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন রাবেয়া (৮০) নামের এক বৃদ্ধা। সে জানেন না করোনা ভাইরাস কি? অভাব অর কষ্টের জীবনে মৃত্যু ভয় তার কাছে। তাই দেশের এ করোনা দুর্যোগের মধ্যেও তিনি প্রতিদিন ঘর থেকে বের হন ভিক্ষা করতে। প্রাণঘাতি করোনার মরণ থাবায় বিশ্ব যখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে মুহূর্তে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। করোনার সংক্রামন ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, নিয়েছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্ষুধার তাড়নায় এই নারী ঘর থেকে বের হয়েছেন ভিক্ষা করতে। তিনি বলেন করোনায় মরার চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা বেশি ভয়ঙ্কর।

গত কয়েকদিন ধরে আরিচা বাসস্ট্যান্ডের কাছে শিবালয় থানার ওয়ালের পাশে হাত উচু করে বসে থাকতে দেখা যায় ওই নারীকে। রাস্তার পাসে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসে ভিক্ষা করছেন সে। যে কোন সময় দুর্ঘটনায় তার জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে এ ভয়ও নেই তার মধ্যে। সে করোনা ভাইরাসের নাম শুনেনি কোন দিন। সারাটা জীবন করেছেন কষ্ট। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চান তিনি। তাই বেঁচে থাকার আশা আর নেই তার। বিধায় মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ঘর থেকে বের হন ভিক্ষা করতে। তার লক্ষ্য একটাই মানুষের কাছে হাত পাতা এবং সাহায্য চাওয়া।

মঙ্গলবার সকালে কথা হয় আরিচা বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার ধারে হাত পেতে বসে থাকা ওই বৃদ্ধার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুঃখ আর অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কেটে গেল সারাটা জীবন। তাই এখন আর বেঁচে থাকার আশা নেই। এখন সকলের কাছে বুঝা হয়ে গেছি। ছেলে সন্তানরা কেউ আর খোঁজ খবর নেয় না।

বয়স্ক ওই নারীর নাম রাবিয়া খাতুন, স্বামীর নাম মৃত-গণি হাফেজ। তার বাড়ি ছিল রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বাবুপড়া গ্রামে। বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে অনেক আগেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে তার। দুই ছেলে থাকে গোয়ালন্দ এক ছেলে সাভারে। দিন মজুরের কাজ করে তারা। ছেলেরা পরিচয় দেয় না ও কোন খোঁজ-খবরও নেয় না। 

বয়সের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন তার ১০০ বছর বয়স হয়েছে। বয়স্ক ভাতার কোন কার্ড পায়নি সে। কারো কাছে চাইলে বলে কার্ড দিয়া কি করবা। তুমিতো চাইয়া-চিন্তা খাও। 

এ ব্যপারে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই লোকটিকে আমি আজকে (মঙ্গলবার) সকালে ওখানে দেখেছি। এ বয়সে তার এ অবস্থা খুবই দুঃখজনক। এরকম পরিণতি আর যেন কারো না হয়। বয়স্ত এ নারী যেই হোন না কেন। এমতবস্থায় সার্মথ্যবান সকলেরই তার পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তাকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো বলে তিনি জানান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com