দিন কাটছে অনাহারে; কাজের সন্ধানে শ্রমিকরা
প্রতিদিন কাজের সন্ধানে ওরা বসে থাকে জয়পুরহাট শহরের বাটার মোড়ের দোকানগুলোর সামনে। করোনার ভয়াবহতা প্রভাব ফেলেনি ওদের প্রয়োজনীয়তার কাছে। প্রতিদিন দিনমজুরের কাজ পেলে ওদের আহার জোটে, কাজ না পেলে দিনকাটে অনাহারে অর্ধাহারে।
করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকার জন্য শহরে প্রতিদিন মাইকিং,পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়লেও তাদের অভিযোগ কাজ না করলে আমরা খাব কি। তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই ঘর থেকে বের হতে আমরা বাধ্য হই। আমরা কাজ না করলে পরিবার না খেয়ে থাকে। কোন সাহায্যও মেলেনি যে দুদিন ঘরে বসে খাব।
করোনার ভয়াবহ অবস্থায় প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যেও শহরে আগমনের কথা জানতে চাইলে সোমবার সকাল ৮টায় কাজের সন্ধানে শহরের বাটার মোড়ে অপেক্ষারত শ্রমিকরা এসব কথা বলেন।
তারা জানায়, করোনার জন্যই এখন কাজ মিলছে না। তারপরও আসতে হয় কাজের সন্ধানে। এ অবস্থায় কোন দিন কাজ মিলছে, কোন দিন মিলছে না। শ্রমিকদের মধ্যে যারা রাজমিস্ত্রী তাদের মজুরি ৫০০ আর যারা দিনমজুর তারা পান ৩০০ টাকা। এই দিয়েই দিন চলে তাদের। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মানুষের চলাফেরায় সরকারি বিধি নিষেধ আরোপের পর থেকে অন্যান্য কাজ-কর্মের সাথে ভাটা পড়েছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে। তারপরও প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ভিড় জমান কাজের জন্য। এ জন্য মাঝে মধ্যেই পুলিশের তাড়াও ভাগ্যে জুটেছে তাদের।
জয়পুরহাট পৌরসভার বাগিচাপাড়া মহল্লার ষাটোর্ধ বয়সের শ্রমিক ওমরআলী বলেন,‘পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। রাজমিস্ত্রীর কাজ করেই সংসার চলে তার। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিনই আসতে হয় কাজের সন্ধানে। তিনি বলেন,কাজ না করলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত কোন সহযোগীতাও পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
পাঁচুর চক মন্ডলপাড়া থেকে আসা রাজমিস্ত্রী আজাদ রহমান বলেন,‘শুনছি ত্রাণ দেওয়া হবে, কিন্তু আমরাতো পাচ্ছি না। জয়পুরহাটের ধলাহার ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রাম থেকে আসা নারী শ্রমিক কুলসুম বেওয়া বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্রমিকের কাজ করে তিনি সন্তানদের নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন। এখন সবদিন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ না পেলে চলব কি করে। চেয়ারম্যান মেম্বাররা ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের পছন্দের মানুষদের। তাদের তালিকায় আমার নাম নেই। একই অভিযোগ কাজের সন্ধানে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্তত ২০জন শ্রমিকের।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে সচেতনতার পাশাপাশি মানুষের খাদ্য সহযোগীতা কার্যক্রম আমাদের চলমান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এই দুর্যোগের মধ্যে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে খাদ্য সহযোগীতা দেওয়ার। তিনি দেশের এই বিপদ মুহুর্তে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।