সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজে খেটে খাওয়া মানুষদের অবহেলা করা হয়েছে: ফখরুল
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে ‘ঋণের প্যাকেজ’ অভিহিত করে এতে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষজনকে অবহেলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রেন্সপনড করেছে। এটা পজিটিভ তখনই বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম যে, আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাত সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টারের কৃষকদের, তাদের কোনো কথা এখানে(প্রণোদনা প্যাকেজ) নেই।এখানে আমার কাছে যেটা মনে হয়ে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা..। এই কোটি টাকা তো এমনি একটা জনগন মধ্যে বলবে যে, ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। দিয়েছে তো ঋণ, পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ।
খেটে খাওয়া মানুষের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাধারণ ‘দিন আনে দিন খায়’ গরীব মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম এটা অনুদান দিতে হবে।আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিতসক-নার্স, চিকিতসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্যখাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র ঋণ নয়। আপনাকে এভাবে তাদেরকে অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরী, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি(প্রধানমন্ত্রী) সেইভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’-এই শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মধ্যে কোথাও, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাই নাই। রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই।
এর আগের দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। স্বল্প মেয়াদী খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্য মেয়াদী খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরো ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছেন তিনি। শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব দলের পক্ষ থেকে ২৭ দফার এই প্যাকেজ প্রস্তাবনা দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইংগিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা(করোনাভাইরাস) মানবসভ্যতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করার জন্য আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী আছি। তারপরেও তারা বলছেন যে আমরা নাকী এমন এমন কথা বলছি যে, দায়িত্বজ্ঞানহীন-কান্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি। কোথায় দেখালেন তারা এসব? আমরা তো ২৭ টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি।প্রত্যেকটা বিষয় যুক্তসঙ্গতভাবে বলেছি। আজকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই করোনাভাইরাসকে মোকাবিলার জন্যে। যেই মানসিকতার দরকার ছিলো, আমি প্রস্তুতি বলব না, যে মানসিকতা সেটাকে তৈরি করবার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। দেশে পূর্ণ লকডাউন দরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি তো মনে করি যে, পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্যা অনলি এনসার। যে ভয়াবহতা আসছে, এখনো রিয়েলাইজ করতে পারছে না তারা। ২৭ দিন হয়ে গেছে। অলরেডি কিন্তু গতকালের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বেই। ওই জিনিসটা যদি আমরা উপলব্ধি পারি, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি, আমরা ওইভাবে পরাজিত করবো, পরাজিত তো অবশ্যই করবো তবে তার জন্যে যে অস্ত্র দরকার, যে উইপেন্স দরকার, সেই উইপেন্সগুলো তো আমরা পাচ্ছি না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকে একটা পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, ৮৭% হাসপাতালে সাধারণ চিকিতসা নেই। যেমন আপনার এপেনডিসাইটিজ হলো, আপনি চাইবেন যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাম করা হোক, সেটা আপনি পাবেন না। আপনার হার্ট এ্যাটাক হলো হাসপাতালে গেলে চিকিতসা পাবেন না। জাস্ট ফ্যাক্ট। এই বিষয়গুলো সরকার নজর দিচ্ছে বলে আমরা দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অন্যদিকে সমন্বয় কোনোখানেই নেই। এই বিষয়গুলো জনগনের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে। করোনা মোকাবিলায় বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছে, করোনা মোকাবিলায় তাদের ভুমিকা নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা যেসব মন্তব্যে করেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এই ধরনের বক্তব্যের একটাই প্রতিক্রিয়া হলো- দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। ইতিমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের যতটুকু নিরাপত্তার মধ্যে রেখে নেতা-কর্মীরা কর্মজীবী দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, তারা মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটে মেয়র জানেন যে, তিনি বৃহত আকারে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন, প্রত্যেকটা জেলা, প্রত্যেকটা উপজেলা, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আমাদের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য সঠিক নয়, এসব অলিক অভিযোগ। এখন কী অভিযোগ করা সঠিক? তিনি বলেন, গতকাল আমরা করোনার মহাদুযোর্গ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক কিছু আবেদন রেখেছি। তার প্রতিউত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পা্দক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, যে মন্তব্যগুলো করেছেন যে, এটা আশা করি নাই যে, তার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উনি এই ধরনের মন্তব্য রাখবেন।