শৃঙ্খলা মেনে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করুন: জাতির উদ্দেশে ভাষণে ব্রিটেনের রানী
শৃঙ্খলা মেনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বিরল ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। ৬৮ বছরের রাজত্বকালে জাতির উদ্দেশে এটি তার চতুর্থ ভাষণ।
স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা) টিভি চ্যানেল, রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তার এ ভাষণ একযোগে প্রচারিত হওয়ার কথা। তবে তার আগেই ভাষণের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে ব্রিটেনে বাড়ছে বেকারত্ব। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পর তার হবু স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। খবর বিবিসি ও এএফপির।
খবরে বলা হয়, করোনা মহামারীতে লোকজনকে নিজ উদ্যোগে শৃঙ্খলা মেনে চলার মাধ্যমে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন রানী। এই বিপর্যয়ের সময় ব্রিটিশরা যে দুঃখ, বেদনা ও আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন ভাষণে তাও স্বীকার করেন রানী। ধন্যবাদ জানান জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের। সংকটকালে জীবন বাজি রেখে আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করেন তিনি। প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে তা পালনের ওপর জোর দেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তিনি বলেন, একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সময়ে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের জাতীয় জীবনে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যা কারও জন্য দুঃখ নিয়ে এসেছে। অনেকের কাছে আর্থিক সংকট এবং আমাদের সবার দৈনন্দিন জীবনে একটি বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
রানী বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের নাগরিকরা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, পরিস্থিতি এক সময় স্বাভাবিক হবে। তখন সবাই এমন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জয়ী হওয়ার জন্য গর্ব করবে। এ প্রজন্মের ব্রিটিশদের তখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এর আগে রানী ২০০২ সালে তার মায়ের মৃত্যুর সময়, ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার শেষকৃত্যের সময় এবং তারও আগে ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় এমন বিশেষ ভাষণ দেন। এছাড়া ২০১২ সালে রানী তার শাসনকালের হীরকজয়ন্তী পালনের সময়ও টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন। ৯৩ বছর বয়সী রানী এলিজাবেথ তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে এখন উইন্ডসর প্রাসাদেই থাকছেন। করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে রাখতে রানীকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে উইন্ডসরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বরিস জনসনের হবু স্ত্রী করোনা আক্রান্ত : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় তার অন্তঃসত্ত্বা হবু স্ত্রীও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। রোববার টুইটারে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জনসনের হবু স্ত্রী কেরি সাইমন্ডস। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমি করোনাভাইরাসের মূল উপসর্গ নিয়ে বিছানায় আছি। বরিস জনসন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আইসোলেশনে রয়েছেন। এর মধ্যেই ৩২ বছর বয়সী কেরি সাইমন্ডসও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র মাসখানেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, খুব শিগগির অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবী কেরি সাইমন্ডসকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে।
ব্রিটেনে বাড়ছে বেকারত্ব : করোনা মহামারীর কারণে ব্রিটেনে বেকারত্ব ও দরিদ্রতা বাড়ছে। লকডাউন জারি হওয়ার পর দেশটিতে মানুষের চাকরি হারানোর হার বাড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকের বিশ্বমন্দার পর করোনার ছোবল ব্রিটেনের অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের ১৪ মিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমায় বসবাস করছে। প্রায় ৪.২ মিলিয়ন শিশু দরিদ্র, যা মোট শিশুর ৩০ ভাগ।
সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সংগঠন জোসেফ রাউন্ট্রি ফাউন্ডেশনের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ডেভ ইনেস বলেন, অল্প বেতনে বা অনিরাপদ কাজ করেন এমন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের ঝুঁকিটা বেশি। গত ১৫ দিনে যুক্তরাজ্যের প্রায় দশ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সরকারি সহায়তার ইউনিভার্সেল ক্রেডিটের জন্য আবেদন করেছেন। এটি অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।
ব্রিটেনের চাইল্ড প্রভার্টি অ্যাকশন গ্রুপের পরিচালক লুইসা ম্যাকগিহান বলেন, মহামারীর আগে যে পরিবারগুলো মোটামুটি অর্থ উপার্জন করতেন এখন তারা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। আর যারা আগে থেকে দরিদ্র ছিলেন তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়।