ক্ষমতাসীনরা শাসন ব্যবস্থাকে নষ্ট করছে: ড. কামাল
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা দেশের শাসন ব্যবস্থাকে নষ্ট করছে। সারা দেশে দুর্নীতি ভরে গেছে, অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা শেষ। ধর্ষণের পর হত্যা, আইনের শাসন অনুপস্থিত। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় সরকারের অপরিহার্যতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ক্যাসিনো বিএনপির সময়ে হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, গত ১০ বছর তো বিএনপি ছিল না।
এই দশ বছরে ক্ষমতাসীনরা যা করেছে সেই ক্রেডিটও তারা বিএনপিকে দিতে চায়। বিএনপি অনেক কিছু করতে পারে, কিন্তু ১০ বছর বিএনপি ক্ষমতায় নেই। এই সময়ে যা হয়েছে সেটাও বিএনপি করেছে এই অভিযোগটা গ্রহণযোগ্য না।
তিনি বলেন, দেশের অবস্থা নিয়ে সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই সরকারকে তো আমরা ভোট দেইনি। তাদের এই কার্যকলাপের জন্য আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য। সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমতের প্রয়োজন নেই। এখানে কেউ দ্বিমতও করবে না।
ড. কামাল বলেন, ভোট হতে দেননি। ২৯-৩০ ডিসেম্বর কেউ ভোট দিয়েছিলেন? আমি একজনও খুঁজে পাচ্ছি না যে ভোট দিয়েছিল। আপনারা পেলে তার ফোন নম্বর আমাকে দেবেন। অনেকে আমাকে বলেছেন ইলেকশন হয়েছে সেটা জানেও না। এই জিনিসটা থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করুক। তিনি বলেন, আমাদের কে বাঁচাবে?
বাইরে থেকে কেউ বাঁচাবে না, আমাদেরকেই বাঁচাতে হবে। স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে ক্ষমতা জনগণের হাতে এনে নিজেদের ভবিষ্যৎ আমরা সবাই মিলে গড়ব ইনশাআল্লাহ।
পত্রপত্রিকার কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, পত্রিকায় বের হচ্ছে- এই যে রেকর্ড পরিমাণ টাকা তারা বাইরে পাঠাচ্ছে, কারা পাঠাচ্ছে। যাদের দেশপ্রেম থাকবে, দেশের প্রতি আস্থা থাকবে তারা তো এভাবে বিদেশে টাকা পাঠাবে না। সরকারকে বলতে চাই- এগুলো তদন্ত করুন, কে করছে, কেন করছে। সরকারের যদি অনুমতি না থাকে তাহলে মানুষ ওইভাবে বাইরে টাকা পাঠাতে পারে না। এই লোকগুলো হাতেগোনা।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, এখন ক্যাসিনো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো হয়ে গেছে ২৯ ডিসেম্বর রাতে। সেই রাতের ক্যাসিনোতে গোটা জাতিকে হারিয়ে দিয়েছে এই সরকার। তিনি বলেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে জাতীয় সরকার অপরিহার্য। এ সময় তিনি জাতীয় সরকারের পাঁচ দফা রূপরেখা ও করণীয় উপস্থাপন করেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার শুদ্ধি অভিযান সফল করতে পারবে না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট ছাত্রলীগের সভাপতি এক কোটি টাকার ওপরে পেয়েছে, এটার কোনো মামলা হয়নি।
ভাইস-চ্যান্সেলর কত টাকা পেয়েছেন এটার ওপরে কোনো তদন্ত হয়নি, মামলা হয়নি। যুবলীগের একটা-দুইটা ধরছে, বাকিগুলো যদি ধরতে চায় তাহলে যুবলীগ থাকবে না।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে লুটপাটের মহোৎসব সৃষ্টি করেছে এ সরকার। মানুষ ভেতরে ভেতরে ক্ষেপে গেছে, বলতে পারে না। তারপরও বলে, কোথাও আড্ডা দিলে বলে, আর ফেসবুকে তো ছড়াছড়ি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে এতদিনে এই সরকার তো থাকতই না। দেশে আওয়ামী লীগ বলতে কোনো কিছু থাকত না।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শাহ আহমেদ বাদল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক প্রমুখ।