বাংলাদেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বেসরকারি ও সরকারি হিসাবে ব্যাপক গড়মিল

0

করোনা উপসর্গ নিয়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে এ ধরনের মৃত্যুর হিসাব সরকারি পরিসংখ্যানে আসছে না।

বুধবার (১ এপ্রিল) পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে ৬ জনের মৃত্যু ও ৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন।

অন্যদিকে দৈনিক মানবজমিনের খবরে বলা হয় শুধু এদিন (১ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১, সাতক্ষীরায় ১, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ১, শরীয়তপুরে ১ ও নড়াইলে ১জন রয়েছেন। এর আগে গত ৩দিনে (২৮-৩১ মার্চ) করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৯ জন মারা যান। সন্দেহজনক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিটি জেলাতেই ঘটছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে উল্লেখ করা হচ্ছে।

মার্চ মাসে কনোরার উপসর্গ নিয়ে কতজন মারা গেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছে ‘বিডিকরোনাইনফো.ওয়ার্ডপ্রেস.কম নামে একটি ওয়েবসাইট। এতে ১১ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২০ দিনে সারা দেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকাটি নিচে তুলে ধরা হলো:

#মৃত্যু-১: ১১ মার্চ। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে কর্মরত এই আনসার সদস্য ৪ মার্চ তারিখে ঠাণ্ডা ও জ্বরের কারণে ছুটি নিয়ে রংপুরে বাড়িতে চলে যান। সেখানে ১১ মার্চ তারিখে মারা যান। এই ঘটনায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কান্সিলের আনসার সদস্যদের মাঝে আতংকের সৃষ্ট হয় এবং সকল সদস্যদের পরীক্ষা করে দেখা হয়, করোনার লক্ষণ আছে কি না। (সূত্রঃ ঢাকাট্রিবিউন, ১৮ মার্চ)

#মৃত্যু-২: ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার। বাগেরহাটের মংলা উপজেলার এক ব্যক্তি ৫-৬ দিন জ্বর-শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধে কাজ হচ্ছিলো না বিধায় খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে আনা হয়। জরুরী বিভাগে উপসর্গ শুনেই তারা বহির্বিভাগে পাঠিয়ে দেয়।অসুস্থ ওই ব্যক্তিকে কোনো রকমে ধরাধরি করে বহির্বিভাগে নেওয়ার পর কোনো চিকিৎসকই তাঁর কাছে যাচ্ছিলেন না। করোনা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় করোনা হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কিন্তু উপসর্গ শুনেই চিকিৎসকেরা ভয় পেয়ে রোগীর কাছে আসেননি। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁকে আবার জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। পরে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার সময় মারা যায়। (সূত্রঃ প্রথমআলো, ২১ মার্চ)

#মৃত্যু-৩: ১৯ মার্চ। নড়াইলের এক ব্যক্তি কিছুদিন আগে সপরিবারে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে বাড়িতে ফেরেন। এরপরই জ্বর, গলাব্যথা, কাশিতে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয়ভাবে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) খুলনায় আনার পথেই তিনি মারা যান। (সূত্রঃ প্রথমআলো, ২১ মার্চ)

#মৃত্য-৪: ১৯ মার্চ। চট্টগ্রামের এই নারী ১৯ মার্চ তারিখে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেসরকারি ‘রয়েল হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডে’ ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্বাসকষ্টে ওইদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালটির আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে চিকিৎসক ওই রোগীকে সেবা দিয়েছেন তাকেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। (সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪ ডট কম, ২৩ মার্চ)

#মৃত্যু-৫: ২২ মার্চ। মিরপুরের টোলারবাগে কোভিড-১৯ এ মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা, পাশের বাসায় বাস করা এই ব্যক্তি দুদিন ধরে ওই ব্যক্তির দুদিন ধরে কাশি হচ্ছিল, খাওয়ার রুচি চলে গিয়েছিল। শনিবার (২১ মার্চ) কুর্মিটোলায় নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপরে রোববারে শ্বাসকষ্টে অচেতন হয়ে গেলে, কুর্মিটোলায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে এম্বুলেন্স ডাকা হয়। লক্ষণ শুনে এম্বুলেন্সচালক ভয় পেয়ে রোগী বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে অন্য এম্বুলেন্সে কুর্মিটোলা নিয়ে যাওয়ার সময়ে পথেই মারা যান। রোববার সকালে আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, কিন্তু পরীক্ষার ফল মিডিয়াতে পাইনি। (সূত্রঃ প্রথমআলো, ২২ মার্চ)

#মৃত্যু-৬: ২২ মার্চ। ভৈরবের এই ব্যক্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি ইতালি থেকে দেশে আসেন। শনিবার (২১ মার্চ) থেকে ওই ব্যক্তি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে রাত নয়টার দিকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর চিকিৎসকেরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের তাঁকে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা করাতে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়ার পরে নমুনা সংগ্রহের জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানানো হয়েছিলো, কিন্তু তারপরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা, টেস্টে রেজাল্ট কি- সে খবর মিডিয়াতে পাইনি। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২২ মার্চ)

#মৃত্যু-৭: ২২ মার্চ। সিলেটের এই নারী গত ৪ মার্চ লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। ১০ দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। গত ২০ মার্চ শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হন ওই নারী। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে আইসোলেশনে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা এবং শনিবার (২১ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আইসোলেশনে থাকা অবস্থাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রোববার (২২ মার্চ) ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের লোক সিলেটে এসে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। তবে এর আগেই ওই নারী মারা যান। (সূত্রঃ যুগান্তর, ২২ মার্চ)

#মৃত্যু-৮: ২৪ মার্চ। জামালপুরের এই বৃদ্ধা শনিবার (২১ মার্চ) রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে তিনি শ্বাসকষ্টে মারা যান। আইইডিসিআরের নির্দেশে সন্ধ্যায় জামালপুরের সিভিল সার্জন মৃত ওই নারীর মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সেই নমুনা পরীক্ষণের ফল মিডিয়ায় পাইনি। (সূত্রঃ ভোরের কাগজ, ২৫ মার্চ)

#মৃত্যু-৯: ২৪ মার্চ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এই নারী তার বাবার বাসায় অসুস্থ মায়ের সেবার কাজ করছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তার মা শ্বাসকষ্টে মারা যান। তার মা’র জ্বর, সর্দি ও কাশি ছিল। সেখানে তিনি অসুস্থ হন, তারও জ্বর, সর্দি, কাশি হয়। গতকাল গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে রাখেনি। সন্ধ্যায় বাবার বাড়িতে না নিয়ে তাকে নিজ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ মার্চ)

#মৃত্যু-১০: ২৪ মার্চ। ওই ব্যক্তি ঢাকার একটি হাসপাতালের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে তার কর্মস্থল থেকে তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দুপুরের পর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ মার্চ)

#মৃত্যু-১১: ২৪ মার্চ। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাতে এই রোগী কোভিড-১৯ এর যাবতীয় লক্ষণ নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। ২০ মার্চ তারিখে তিনি জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন, অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ২২ মার্চ আইসিইউতে নেয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান। (সূত্রঃ বিটিনিউজ২৪ ডট কম, ২৬ মার্চ)

#মৃত্যু-১২: ২৪ মার্চ। সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা এই বৃদ্ধ দেশে থাকলেও তার ছেলে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তিনি কিডনির জটিলতায় ভূগছিলেন, নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হতো। গত ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে তার ছেলে দেশে ফেরেন এবং পরদিন থেকেই গিয়াসউদ্দিনের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাবাকে নিয়ে সিলেট কিডনী ফাউন্ডেশনে যান তার প্রবাসী ছেলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে গিয়াস উদ্দিনকে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেন।হোম কোয়রেন্টিনে থাকা অবস্থাতেই মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত ৯ টায় তিনি মারা যান। (সূত্রঃ সিলেটটুডে২৪ ডট কম, ২৫ মার্চ)

#মৃত্যু-১৩: ২৫ মার্চ। খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা জাতির এই তরুণ শ্রমিক চট্টগ্রামের একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাজ করতেন। ঠাণ্ডা, উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। এবং বুধবারে বাড়িতেই মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান আইইডিসিআর এর পরামর্শ মোতাবেক মৃত ব্যক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন, কেননা তাদের কাছে কোন সুরক্ষা সরজঞ্জামাদি ছিল না। (সূত্রঃ ডেইলীস্টার, ২৬ মার্চ)

#মৃত্যু-১৪: ২৫ মার্চ। খাগড়াছড়ির সদর হাসপাতালে বুধবার (২৫ মার্চ) এই ব্যক্তি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসেন। তাকে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার ৬ ঘন্টার মধ্যেই তিনি মারা যান। (সূত্রঃ ডেইলী স্টার, ২৬ মার্চ)

#মৃত্যু-১৫: ২৬ মার্চ। ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে একই হাসপাতালের আইসিইউতে পাশাপাশি বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই ব্যক্তি। সে ঘটনার পরে ওই হাসপাতাল থেকে সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং নিজ নিজ বাসায় সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলে থাইরয়েড সার্জারির এই রোগীও খুলনায় চলে আসেন। কিন্তু বুধবার (২৫ মার্চ) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি থাইরয়েড সার্জারিতে ইনফেকশন নিয়ে ভর্তি হন। ঢাকায় করোনা রোগীর সংস্পর্শে তথ্য গোপন করে ভর্তি হলেও, বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে তার করোনার লক্ষণ শুরু হয়, তার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এরপরে, গোপন করা তথ্য প্রকাশ পেলে তাকে সার্জারি ইউনিট-২ থেকে সরিয়ে ফাঁকা একটি ওয়ার্ডের এক কোণে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল এবং দুপুর দেড়টার দিকে মারা যান। (সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন, ২৬ মার্চ)। পরে, মৃত ব্যক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। একদিন পরের খবরে অবশ্য বলা হচ্ছে- ঐ ব্যক্তির করোনা টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। (সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন, ২৭ মার্চ)

#মৃত্যু-১৬: ২৭ মার্চ। গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফিরে জ্বর ও সর্দি–কাশিতে পড়েন বগুড়ার শিবগঞ্জের এই ব্যক্তি। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ত্রী প্রথমে পাড়া–প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ এগিয়ে আসেননি। এরপর স্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে। কিন্তু সারা রাতে কোথাও থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি। তিনি রাতে আইইডিসিআর হটলাইনে ফোন দিয়ে কাউকে পাননি। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করেও সাড়া পাননি। ওই নারী বলেন, ‘দেখছি’ বলার বেশি কেউ কিছু করেননি। ছোট একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরে নিস্তেজ মানুষটার পাশে বসে আছেন—জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেঁচে আছে, না মরে গেছে, বুঝতে পারছি না। কী করব বুঝতে পারছি না। করোনাভাইরাসের ভয়ে কেউ তো কাছে আসছেন না।’ (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৮ মার্চ)

#মৃত্যু-১৭: ২৭ মার্চ। নোয়াখালির বেগমগঞ্জের এই ব্যক্তি ঢাকার একটি হাসপাতালে এক ডাক্তারের সহকারি হিসেবে কাজ করতো। সম্পরিত তিনি জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও কাশি নিয়ে নোয়াখালি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মারা যান। আইইডিসিআরের পরামর্শ মোতাবেক নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষণের ফল কি, তা মিডিয়ায় পাইনি। (সূত্রঃ ডেইলী স্টার, ২৭ মার্চ)

#মৃত্য-১৮: ২৮ মার্চ। বগুড়ার শিবপুরের এই ব্যক্তি ঢাকায় ব্যবসা করতেন, গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) তিনি বগুড়ায় যান। পাঁচদিন জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিলেও তার জ্বর ভাল হচ্ছিলনা। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে তার মৃত্যু হয়।আইডিসিআর জানিয়েছিল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলের একটি টিম নমুনা সংগ্রহ করবে। এরপরের খবর এখনো জানি না। (সূত্রঃ চ্যানেল২৪বিডি ডট টিভি, ২৮ মার্চ)

#মৃত্যু-১৯ ২৮ মার্চ। লালমনিরহাটের এই ব্যক্তি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। গত ৭-৮ দিন আগে জ্বর, সর্দ্দি ও কাশি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে জ্বর, সর্দ্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে চিকিৎসাপত্র গ্রহণ করেন। শনিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে তিনি মারা যান। (সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪, ২৮ মার্চ)

#মৃত্যু-২০ ২৮ মার্চ। বগুড়ার এই ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে গত মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) শিবগঞ্জ উপজেলার মহব্বত নন্দীপুর গ্রামে স্ত্রীর কর্মস্থল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসেন। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে মারা যান ওই ব্যক্তি। এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার খবরে এলাকা জুড়ে করোনা আতংক ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় প্রশাসন সেখানকার ১৫টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় স্বাস্থ্য বিভাগ। বিকেলের দিকে মরদেহ দাফন নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি, গ্রামের লোকজন সেখানে দাফনে আপত্তি জানায়। (সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪, ২৮ মার্চ)

#মৃত্যু-২১: ২৮ মার্চ। চাঁদপুরের এই ব্যক্তি কয়েকদিন আগে নারায়নগঞ্জে তার কর্মস্থলে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হন।প্রথমে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তার স্ত্রী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামীকে। ২৬ তারিখে ভর্তির দুদিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। আইইডিসিআর এর রিপোর্টে টেস্ট নেগেটিভ এসেছে বলে চাঁদপুর সিভিল সার্জন জানিয়েছেন। (সূত্রঃ কালের কন্ঠ, ২৮ মার্চ)

#মৃত্যু-২২: ২৮ মার্চ। বরিশালের এই নারীর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল, কয়েক দিন আগে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল সদর হাসপতালে চার দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপরে শুক্রবার (২৭ মার্চ) থেকেই তাঁর হালকা কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শনিবার (২৮ মার্চ) রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই নারীকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রোগীর স্বজনদের কাছে উপসর্গের ইতিহাস শুনে তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়। করোনা ইউনিটে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৩: ২৮ মার্চ। ভোলার বৃদ্ধ এই ভ্যানচালক সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য তিন সপ্তাহ আগে পটুয়াখালী জেলা শহরের টাউন কালিকাপুর এলাকায় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আসেন। শনিবার (২৮ মার্চ) বিকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পরে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৪: ২৮ মার্চ। নওগাঁর এই তরুণ ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে জ্বর আর কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় আসেন। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার সময় করোনা আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহে মেম্বার ও গ্রামের লোকজন তাকে আসতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আদমদীঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসা না করেই ফিরিয়ে দেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে পরে তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা দেখেই হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌঁছার পর সেখানেও ভালোভাবে না দেখে রাজশাহী নিয়ে যেতে বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে তার জ্বর কোনোভাবেই কমছিল না। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৮ মার্চ) রাতে তার মৃত্যু হয়।। (সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৫: ২৯ মার্চ। পটুয়াখালীর এই ব্যক্তি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।সেখান থেকে রেফার করার পর শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্বজনেরা। ওই রোগীকে প্রথমে মেডিসিন ইউনিটে এবং পরে করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপতালের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কোনো কিট নেই। তবুও রোগীর লক্ষণ দেখে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা ইউনিটে এখন পাঁচজন রোগী ভর্তি আছেন। তাঁরা কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে নিশ্চিত বলা যাবে না। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৯ মার্চ)

#মৃত্য-২৬: ২৯ মার্চ। মানিকগঞ্জের এই নারীর শ্বশুর এক সপ্তাহ আগে মারা যান। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন, যেখানে অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। এরপরে গত সাত দিন ধরে তিনি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। দুই দিন ধরে তার পাতলা পায়খানা ছিল। রোববার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আইইডিসিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিকটতম প্রতিবেশীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে নিহত ওই ব্যক্তির পুরো গ্রামকেই লকডাউন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। (সূত্রঃ আরটিভিঅনলাইন ডট কম, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৭: ২৯ মার্চ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা এই নারী কয়েক দিন ধরেই সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অল্প অল্প অসুস্থ ছিলেন। তাই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। আইইডিসিআরকে জানানো হলে রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় এসে নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই পরীক্ষার ফল আসেনি। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৮: ২৯ মার্চ। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার এই বৃদ্ধ ‘স্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টজনিত’ সমস্যায় শনিবার (২৮ মার্চ) খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। তাকে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়। রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তিনি মারা যান। আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনা টেস্টের জন্যে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। (সূত্রঃ ময়মনসিংলাইভ ডট কম, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-২৯: ২৯ মার্চ। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এই নারীর ৪/৫ দিন আগে প্রচণ্ড জ্বর, কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বিষয়টি জানাতে হটলাইনে ফোন করা হলেও কেউ ধরেনি। মারা যাওয়ার পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তাঁরাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেউই আসেননি। পরে পারিবারিক গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৯ মার্চ)

#মৃত্যু-৩০: ২৯ মার্চ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজে’লার এই ব্যক্তি গত তিন চার দিন ধরে জ্বর ও শ্বা’সক’ষ্টে ভুগছিলেন। তিনি বাগেরহাট জে’লার রামপাল উপজে’লায় পাইলিং কন্সট্রাকশনের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত চার দিন আগে সাধারণ ছুটি পেয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর থেকেই তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। হাসপাতালে না নেয়ায় এক পর্যায়ে রবিবার (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যাক্তির সংস্পর্শে যারা ছিলেন তারাসহ আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। (সূত্রঃ জাগোনিউজ, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩১: ৩০ মার্চ। দিনাজপুরের বিরামপুরের এই দিনমজুর ১০/১২ দিন আগে কুমিল্লার কর্মস্থল থেকে ঠাণ্ডা ও জ্বর নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। কুমিল্লায় যে বাড়িতে তিনি কাজ করতেন, তার মালিক একজন সৌদি প্রবাসী যিনি সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। প্রশাসন ঐ বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টাইন রেখেছিলো, কিন্তু এই দিনমজুর সেখান থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং জন্ডিসও দেখা দেয়। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তির পরিবারের ৪ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। (সূত্রঃ ঢাকাট্রিবিউন, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩২: ৩০ মার্চ। রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে যশোরের ১২ বছর বয়সী এই শিশু সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে। তাকে ভর্তি করে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। সকালে চিকিৎসক ওই ওয়ার্ড পরিদর্শনে গিয়ে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পান। এ সময় ওই ওয়ার্ডে শিশুর সঙ্গে স্বজনদের কেউ ছিলেন না। করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা গেল কি না, তা নিশ্চিত নয়। পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে শিশুটির রোগের ইতিহাস শুনে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, শিশুটির রোগের ইতিহাসের সঙ্গে করোনাভাইরাসের লক্ষণ মিলছে না। এ জন্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’ (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৩: ৩০ মার্চ। কুষ্টিয়ার এই ব্যক্তি পেশায় ইজিবাইকচালক ছিলেন। শহরের চৌড়হাস এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) তাঁর সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়। পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৪: ৩০ মার্চ। সুনামগঞ্জের এই নারী উচ্চরক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। সোমবার (৩০ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে তার পরিবারের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত নারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় তার নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন। ঐ নারীর স্বামীকে পরীক্ষার জন্যে সিলেটে পাঠানো হয়েছে। (সূত্রঃ সুনামগঞ্জ২৪ ডট কম, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৫: ৩০ মার্চ। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার এই যুবক একটি কীর্তন পার্টির সঙ্গে কাজ করতেন। কুমিল্লা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তিনি কীর্তন করে বেড়াতেন। গত ১০-১২ দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। হঠাৎ করে ৩-৪ দিন ধরে তার অসুস্থতা শুরু হয়। গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) জ্বর নিয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে যান। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে ভীষণ জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথার জন্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে বেলা একটার দিকে তার মৃত্যু হয়। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই যুবক জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৬: ৩০ মার্চ। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ১২ বছর বয়সী এই শিশু গত চার দিন ধরে জ্বর ছিল এবং সে অ্যাজমায় আক্রান্ত ছিল। সম্প্রতি তাদের পাশের বাড়িতে ইতালি থেকে এক প্রবাসী এসেছেন। তবে তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। জ্বর নিয়ে রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা খারাপ হলে ভোরে ঢাকা নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়। আইইডিসিআরকে বিষয়টি অবহিত করলেও রক্তের নমুনা সংগ্রহ না করে ছেলেটির দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় করোনাভাইরাস আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে। (সূত্রঃ ঢাকাট্রিবিউন, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৭: ৩০ মার্চ। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী টানা দশদিন জ্বর, কাশি ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সব উপর্সগ ছিল তার। তাই স্থানীয়ভাবে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। (সূত্রঃ সমকাল, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৮: ৩১ মার্চ। ঢাকার নবাবগঞ্জের এই রিকশাচালক কয়েকদিন ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। ঐ ব্যক্তিকে সোমবার (৩০ মার্চ) রাতে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে মারা যান তিনি। (সূত্রঃ চ্যানেল২৪ ডট টিভি, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৩৯: ৩১ মার্চ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের এই আদিবাসী নারী ১১ দিন আগে রাজশাহীর তানোরের কালীগঞ্জ এলাকায় খেতের আলু তোলার কাজে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন তার মেয়েসহ ১১ জন নারী-পুরুষ। দুই দিন আগে তিনি কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে তারা এলাকায় ফিরে আসেন। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ তিনি মারা যান)। যাদের সঙ্গে রাজশাহীর তানোরে কৃষিকাজে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়ে এসেছেন পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪০: ৩১ মার্চ। টাঙ্গাইলের মধুপুরের এই পোশাকশ্রমিক ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। রোববার (২৯ মার্চ) জ্বর নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। বিষয়টি তাঁর পরিবারের লোকজন গোপন রেখেছিলেন। সোমবার (৩০ মার্চ) থেকে তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। তার রক্তবমিও হয়েছিল। এই পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের একটি দল তাদের বাড়িতে তার নমুনা সংগ্রহ করার জন্যে গিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই পোশাকশ্রমিকের বাড়ি অবরুদ্ধ (লকডাউন) করা হয়েছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ মার্চ)

#মৃত্যু-৪১: ৩১ মার্চ। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধাওয়া গ্রামের এই স্কুলছাত্র চার দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিল। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে মোবাইল ফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। তবে তারা ছেলেটিকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং দুপুরের দিকে সে মারা যায়। এই মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন মৃত ছেলেটির ও তার আশপাশের বাড়ির লোকদের লকডাউন এবং ওই গ্রামকে কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করেছে। মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। (সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪২: ৩১ মার্চ। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার এই কিশোরী দুই মাস ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। এর সঙ্গে ১০ দিন ধরে তার জ্বর, সর্দি-কাশি শুরু হয়। মঙ্গলবার(৩১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বালাগঞ্জ থেকে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে করোনা সন্দেহে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল তাকে পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দেয়। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বেলা দুইটার দিকে নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বলেন, ওই কিশোরী করোনায় নয়, হার্ট ফেইলুর হয়ে মারা গেছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪৩: ৩১ মার্চ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মান্দাইল এলাকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী নাসির উদ্দিনের ছেলে ফয়সাল আহমেদ গত ২০ দিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশিতে ভুগছিলেন। সোমবার সকালে ফয়সালের কাশির সাথে নাক দিয়ে রক্তপড়া শুরু হলে তার বড় ভাই জিগির আহমেদ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজধানীর মিটফোর্ড, ঢাকা মেডিকেলসহ উত্তরা পর্যন্ত ১৬ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকালে তিনি মারা যান। (সূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪৪: ৩১ মার্চ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার টিএন্ডটি এলাকার এই সবজি বিক্রেতা মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট সহ শরীরে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও এক্সে প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি না করে রাজবাড়ীতে বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা থেকে ফেরার পথে ফেরির মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (সূত্রঃ বিডি-প্রতিদিন, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪৫: ৩১ মার্চ। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়। সেখানে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় তিনি মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিআইটিআইডি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। রোগীটি আগে থেকেই ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সেই সঙ্গে হাঁপানিও ছিল। তাই তাকে আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইটিআইডির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক শাকিল আহমদ জানিয়েছেন, ‘(১ এপ্রিল) সকালে মৃত রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হবে। (সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪, ৩১ মার্চ; জাগোনিউজ২৪, ৩১ মার্চ)

#মৃত্যু-৪৬: ৩১ মার্চ। এ ব্যক্তি মঙ্গলবারে (৩১ মার্চ) প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কুর্মিটোলা ওই রোগীকে সোহরাওয়ার্দীতে পাঠিয়ে দেয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সন্ধ্যার দিকে মারা যান। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ওই রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। তবে আরেকট একটি সূত্র মারফত প্রথম আলো জানিয়েছে, মৃত্যুর পর তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ১ এপ্রিল)

এছাড়া সামাজিক গণমাধ্যমে করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর বেশ কিছু পোস্ট দেখা গেলেও যাচাইয়ের অভাবে সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়নি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com