‘আমাগোরে বিষ দেন, বিষ খাইয়া মইরা যাই’
করোনাভাইরাসের এই সময়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ আর ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন।
হাট-বাজার, পার্ক থেকে চাঁদা আদায় করেই চলতো তাদের জীবন। করোনার কারণে মানুষ বাইরে বের না হওয়ায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। সমাজে নানা বঞ্চনার শিকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে এখন শুরু হয়েছে হাহাকার।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন জয়া সিকদার। তিনি লিঙ্গ-রূপান্তরিত এক নারী। করোনায় উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই তার কাছে ফোন করছেন। বলছেন দুঃখের কথা। এসব বিষয় নিয়ে গত ২৮ মার্চ জয়া সিকদার তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন।
সেখানে জয়া সিকদার লেখেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। এখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার বড় প্রশ্ন সবার কাছে। সবাই বলে সেভ (নিরাপদে) থাকবেন, বাসায় থাকবেন, ঘরের বাইরে কোথাও যাবেন না। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সমাজে ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত মানুষ…। ভাসমান ট্রান্সজেন্ডার, সেক্স ওয়ার্কার (যৌনকর্মী) সুমি, নদী, রুপালী, বিপাশা, মনীষা, কাজল, শান্ত- ওরা যখন ফোন কলে আমাকে বলে, জয়া আপা এখনতো আর আমরা ওসমানী উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা ও গুলশানের লেকের পারে দাঁড়াইতে পারি না। লকডাউন হওয়ার কারণে কোথাও অবস্থান করার জায়গাও নেই আমাদের। আপনি তো আমাদের নেত্রী, সারাজীবন সেক্স ওয়ার্কারদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করে গেছেন। এখন আমরা ভাসমান হিজড়া, যৌনকর্মীরা কোথায় যাবো, আমাদের না নেবে বাবা-মা আমাদের না নেবে সমাজ ও রাষ্ট্র। কেননা নারী হওয়ার জন্য সমাজ পরিবার ছেড়ে কোনো কাজ না পেয়ে হয়েছি যৌনকর্মী, রাষ্ট্র আমাদের জন্য কোনো চাকরি বরাদ্দ করেনি। ২০১৪ সালে শুনছিলাম হিজড়া গো চাকরি হইবো, তারপর হুনি (শুনি) মেডিকেলে পরীক্ষা করে নাকি কইসে আমাকে চাকরি হইব না। এরপর থেকে আর তো কোনো খবর নিল না। আমরাতো যৌনকর্মী হইয়া বাঁইচা আছি। এখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবই বন্ধ তাইলে আমরা কেমনে বাঁচুম আর কী খামু? আপনে আমাগোরে বিষ দেন, বিষ খাইয়া মইরা যাই আপা। এই কথাগুলো শুনার পর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।’
জয়া আরও লেখেন, ‘তাই আপনাদের কাছে এই পোস্ট দিলাম। আপনারা আমাদের যে যা পারেন, তাই দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। সাহায্য পাঠাতে যোগাযোগ করুন ফোন নম্বর ০১৭১৮-১২৫১২১। এছাড়া আপনারা বিকাশ নম্বরে ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাহায্য পাঠাতে পারেন। বিকাশ নম্বর ০১৭১৮-১২৫১২১। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট- পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, আসাদ এভেন্যু, নাম: সম্পর্কের নয়া সেতু, হিসাব নম্বর: ২৭০৬১০১০৭৭৭৫৬।’