ঘুমালেই বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
অসুস্থতার ভয়ে কমে গেছে ঘুম? অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসময় ঘুম সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। শরীরে যখনই কোনো বড় পরিবর্তন হয়, মানসিক চাপ বাড়ে, ঘুম কমে যায়, দুর্বল হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রোগ সারতে চায় না। কিন্তু যখন স্ট্রেস-টেনশন তত নেই, তখন অসুস্থ হলে কিন্তু ঘুম বাড়ে। কারণ শরীর জানে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গেলে তার তাকে তরতাজা হতে হবে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। ঘুম যার অন্যতম মাধ্যম।
তবে এই সময়ে ঘুম না আসার সবচেয়ে বড় কারণ হলো স্ট্রেস। কিন্তু ভেবে দেখুন, স্ট্রেস তো রোগের ভয়েই। যদি রোগ হয় তো কী হবে- ভেবে ভেবে যে ঘুম নষ্ট করছেন, তাতে তো আরও ক্ষতি হচ্ছে। কাজেই বাস্তবকে বুঝুন। স্ট্রেস নিজে থেকে কমাতে না পারলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। কিন্তু ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা করবেন না। ঘুমাতেই হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘুম ঠিক কী ভাবে কাজ করে-
কোনো ক্ষতিকর বস্তু, তা সে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস হোক কি প্রোটোজোয়া-ফাংগাস বা অন্য কিছু, শরীরে ঢুকলে তৎপর হয়ে ওঠে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তি। সৈন্য-সামন্ত পাঠায় তাকে ধ্বংস করতে। তার মধ্যে প্রধান হলো রক্তের শ্বেত কণিকা বা টি সেল। সরাসরি সামনে থেকে যুদ্ধ করে সে। কিন্তু যদি কোনো কারণে স্ট্রেস বাড়ে, ঘুম কমে যায়, এবং তা বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকে, ভাটা পড়ে তার এনার্জিতে। গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায় তার। আর সেই অবসরে প্রতিরোধের বেড়া ডিঙিয়ে সংক্রমণ ঢুকে পড়ে শরীরের আনাচে-কানাচে।
শুধু এটুকু নয়, ঘুমের সঙ্গে যোগ আছে প্রোটিন সাইটোকাইনের, যার কাজ ঝড়ের বেগে কোষে কোষে বিপদের সংকেত পৌঁছে দেয়া, যাতে তারা প্রস্তুত থাকে৷। কিন্তু ঘুমের যে চারটি পর্যায় আছে, সেসব পর্যায় যদি ৭-৮ ঘণ্টার নিশ্ছিদ্র ঘুমে বার পাঁচেক অন্তত ঘুরে-ফিরে না আসে, সাইটোকাইনের উৎপাদন কমে যায়।
ঘুম ভালো না হলে লড়াইয়ের গেমপ্ল্যানও সঠিকভাবে বানানো যায় না। সারাদিন যে লড়াই হয়েছে, কীভাবে তাকে আরও উন্নত করা যায়, সেই প্ল্যান সে ছকে নেয় ঘুমের সময়৷ তাকে সেই সময়টুকু না দিলে লড়াইটা অনেক সময়ই জোরদার হয় না।
পর্যাপ্ত ঘুমের উপায়:
* ঘুম পাচ্ছে অথচ হাতের কাজটা সেরে নিই বা সিনেমা শেষ হলে ঘুমোতে যাবো, এখন অন্তত সেসব চলবে না। ঘুম পাওয়া মাত্র বিছানায় যান।
* শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটা বা টিভি দেখা চলবে না৷। হতে পারে আপনার ঘুম না আসার সবচেয়ে বড় কারণ সেটাই। এর একটি বড় কারণ হলো নীল আলো, যা মোবাইল বা টিভির পর্দা থেকে এসে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। কাজেই ঘুমানোর অন্তত দু-ঘণ্টা আগে মোবাইল ও টিভি থেকে দূরে থাকুন। বই পড়া, গান শোনা, হাঁটাহাটি, মন ভালো করা আড্ডা, সব চলবে, কিন্তু মোবাইল ও টিভি নয়।
* শুতে যাওয়ার অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি-কোল্ড ড্রিংক্স-চকলেট বাদ। কারণ এতে উপস্থিত ক্যাফেইন আপনাকে ঘুম পাড়ানোর বদলে আরও সজাগ করে দেবে।
* আগে হয়তো সারাদিন কাজকর্মের পর এত ক্লান্ত থাকতেন যে যেখানে-সেখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন, এখন এই শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেয়ার সময় তেমনটা নাও হতে পারে। কাজেই বিছানা যেন আরামদায়ক হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
* ঘুমের রুটিন ঠিক রাখুন। অর্থাৎ ঘুম হোক বা না হোক, শুতে যাওয়া ও সকালে ওঠার সময় যেন ঠিক থাকে। তাতে শরীরের যে নিজস্ব ঘুমের ঘড়ি, ঘুমের ছন্দ তা ঠিক থাকবে।
* খাটাখাটনি করুন। হাঁটুন, ঘরের কাজ করুন, ব্যায়াম করুন। স্ট্রেস যেমন কমবে, ক্লান্ত শরীরে ঘুমও ভালো হবে।