বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা: ইতিহাসের এই দিনে বিএনপির স্মরণীয় ভূমিকা

0

১৯৯৬ সালের এই দিনে প্রথম সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল বিএনপি (ছবি: সংগৃহিত)

ইতিহাস কথা বলে। ইতিহাস সত্যতাকে বুকে ধারণ করে বয়ে চলে নদীর মতো নিরবধি। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকেই খোঁজে পাওয়া যায় কোনও একটা জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। আজ ৩০ মার্চ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। কারণ ১৯৯৬ সালের এই দিনেই প্রথম সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে পদত্যাগ করেছিল বিএনপি সরকার।  

তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের দাবির মুখে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যোগ করা হয়। সাংবিধানিকভাবে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। 

সেসময় তার উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন- ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক মো. শামসুল হক, সেগুফতা বখত চৌধুরী, এ জেড এম নাসিরউদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান খান, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ,ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী এবং অধ্যাপক  জামিলুর রেজা চৌধুরী।

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সরকারের অধীনেই দেশে প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, জালিয়াতি ও প্রহসনের অভিযোগ তোলে বিএনপি। যদিও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। 

এর পর ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান। তার অধীনে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে বিএনপি-জামায়াত জোট।

সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতেন পূর্বতন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু ২০০৬ সালে বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি তোলে আওয়ামী লীগ। 

ওই পরিস্থিতিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেন। আর তাতে করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে দেশে জরুরি আইন জারি করে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এই পদ ছেড়ে দেন। তাঁর পদে স্থলাভিষিক্ত হন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকলেও সেনাপ্রধানের হাতেই ছিল মূল ক্ষমতা। 

১৯৯৬ থেকে ২০০৮ – এই সময়কালে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দিলে এরই আলোকে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে বিলুপ্ত করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। 

এরপর দেশে পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়ায় দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। পরবর্তী পাঁচ বছরও দলীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায় দলটি। কিন্তু ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই দেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীণ অবস্থায় গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সারা দেশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে সেই নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা পায় একাদশ জাতীয় নির্বাচন। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com