পাশে কেউ নেই, স্বতন্ত্র প্রার্থী মৌসুমী
২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদি নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই নির্বাচনে দুটি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার খবর শোনা যাচ্ছিল। প্যানেল দুটি হলো মৌসুমী-ডি এ তায়েব প্যানেল ও মিশা সওদাগর- জায়েদ খান প্যানেল। তফসিল ঘোষণার পরপরই প্যানেল দুটির খবর আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৌসুমী-তায়েব প্যানেলের সঙ্গে অন্যান্য পদে ফেরদৌস, রিয়াজ, পূর্ণিমা, পপি, নিপুণ, ইমনসহ অনেকেরই নির্বাচন করার কথা ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৌসুমীর বাসায় নির্বাচনের কয়েকটি প্রস্তুতি সভার ছবিতেও তাঁদের অনেককেই দেখা গিয়েছিল। ১ অক্টোবর ২১ পদের বিপরীতে প্যানেলটি ৩০টি মনোনয়ন ফরমও তুলেছিল। কিন্তু জমা দেওয়ার এক দিন আগেই গুঞ্জন ছড়ায়, মৌসুমী-ডি এ তায়েব প্যানেল ভেঙে গেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে অন্যান্য পদে তাঁরা কোনো প্রার্থী পাচ্ছেন না। প্যানেলের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, মৌসুমী ও ডি এ তায়েবকে যাঁরা উৎসাহিত করে আসছিলেন, সেসব উৎসাহদাতা শিল্পীরা সরে পড়েছেন।
সেই গুঞ্জনই সত্য হলো আজ ৩ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়ে এসে।
বেলা তিনটার দিকে কেবল ওমর সানীকে সঙ্গে নিয়ে বিএফডিসিতে নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে আসেন মৌসুমী। সঙ্গে তাঁর প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক ডি এ তায়েবও ছিলেন না। এরপরই নির্বাচন কমিশনারের কাছে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বেরিয়ে এসে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন মৌসুমী।
মৌসুমী বলেন, ‘প্যানেল করতে পারলাম না। স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলাম। কারণ, আমি এখন একা। যাঁরা আমাকে সভাপতি করে প্যানেল তৈরিতে পরামর্শ, সাহস দিয়েছিলেন, তাঁরা সরে গেছেন। নির্বাচনে আমার সঙ্গে কেউ নেই।’
মিশা সওদাগরের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনারের অস্থায়ী কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। বিএফডিসি, ঢাকা, ৩ অক্টোবর। ছবি: শফিক আল মামুনএই চিত্রনায়িকা আরও বলেন, ‘অনেক বড় চমক দিয়েই একটি প্যানেল প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন ধরে একটি মহল আড়াল থেকে বাধা সৃষ্টি করে আসছিল। আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, সবাইকে নির্বাচন না করতে প্রভাবিত করেছেন। এমনকি আমাকেও সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এটা কাম্য নয়। শিল্পী সমিতি একটি পরিবার। এমনটিই জেনেছি সব সময়। কিন্তু এবার নির্বাচনে এসে অনেক কিছুই দেখছি। যা একজন শিল্পী হিসেবে প্রত্যাশা করিনি আমি।’
আপনাকেও সরে যেতে বলা হচ্ছে। কেন বলেছেন? কী মনে হয় আপনার?—এমন প্রশ্নের জবাবে মৌসুমী বলেন, ‘কেন বলেছেন, তা আমি জানি না। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি কোনো জাতীয় নির্বাচন না। তারপরও বড় বড় জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, সরে যাও। ঠিক আছে আমি সরে যাব। কিন্তু অন্যায়ভাবে যেসব শিল্পীর ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, তাঁদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এসব অসহায় শিল্পীর সমস্যার সমাধান হোক। অসহায় শিল্পীদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই আমি নির্বাচন করছি।’
নির্বাচন কমিশনারের অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার আগমুহূর্তে চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খসরু, ডিপজল, রুবেল ও মিশা সওদাগর। বিএফডিসি, ঢাকা, ৩ অক্টোবর। ছবি: শফিক আল মামুনএখন নির্বাচনটা কেমন হবে আশা করছেন? মৌসুমীর উত্তর, ‘কী হবে জানি না। তবে অভিভাবক ও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কাছে আমার অনুরোধ, নির্বাচনে আমাকে সরে দাঁড়ানো বা প্রতিহত করার জন্য যে অপচেষ্টা চলছে, তা যেন না হয়। একটি প্যানেল করতে দিলে কিছুই ক্ষতি হতো না। আমার সঙ্গে শিল্পীরা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্য তাঁরা মনে কষ্ট পেয়েছেন। আর আমি আগে থেকেই যেহেতু ঘোষণা দিয়েছি, এ কারণে সরে যাচ্ছি না। তা ছাড়া অনেকেই আমার দেখাদেখি স্বতন্ত্র দাঁড়াচ্ছেন। তাঁদের কথা, শেষ পর্যন্ত যদি আমিও নির্বাচনে না থাকি, তাহলে চাওয়ার জায়গাটা সব শেষ হয়ে যাবে। তাই আমি নির্বাচন করছি। দেখি কী হয়!’
এরই মধ্যে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নির্বাচনী কার্যালয়ে আসে মিশা-জায়েদ প্যানেল। বিকেল পাঁচটা বাজার কয়েক মিনিট আগে তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে ২১ সদস্যের প্যানেল জমা দেন।
বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। বিএফডিসি, ঢাকা, ৩ অক্টোবর। ছবি: শফিক আল মামুনএদিকে মনোনয়নপত্র তোলার পরও জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে মুঠোফোনে ডি এ তায়েব বলেন, ‘শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রে নাকি আছে, প্রথম শ্রেণির কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। বিষয়টি আমি জানতাম না। শিল্পী সমিতি থেকেও আমাকে গঠনতন্ত্রের কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। এরপর জ্যেষ্ঠ অভিনেতা সোহেল রানা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি আর মনোনয়নপত্র জমা দিইনি।’
এই অভিনেতা ও পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এরপরও আমি যদি নির্বাচনে যেতাম। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগত। আমাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হতো।’