হেফাজতের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া: স্মৃতি ও প্রার্থনা
২০১৩ সালে শাপলার ম্যাচাকারের পর যখন হেফাজতের উপর ক্র্যাকডাউন চলে, সারা দেশে অনেকেই বন্দি হন ৷ কারাবন্দীদের সেই তালিকায় আমিও ছিলাম ৷ হেফাজতের তিনটি মামলাসহ মিরপুর ও দারুস সালাম থানার ১২টি পেন্ডিং মামলায় আমাকে শ্যেন এ্যারেস্ট দেখানো হয়৷
মোট ১৭টি মামলা মোকাবেলা করে জামিন নিয়েই কারাগার থেকে আমাকে বের হতে হয়েছিল ৷ এতগুলো মামলা শুনানি করে জামিন করার ক্ষেত্রে যার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তিনি হলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ৷
তার প্রতিষ্ঠান থেকেই হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ আমাদের প্রায় সকল হেফাজত বন্দিদের মামলা পরিচালনা করা হয় ৷ তার জুনিয়র আইনজীবীরাই মামলা সংক্রান্ত অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ৷ তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে মামলা চালাতেন৷ আল্লামা বাবুনগরীর জামিন তিনিই নিয়েছিলেন ৷
আজও আমার চোখে ভাসে সেই দৃশ্যটি, যেদিন আমার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৭টি মামলার জন্য ১০দিন করে মোট ৭০দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ, সেই রিমান্ড আবেদনের বিপক্ষে আমার আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেছিলেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া নিজেই ৷ খুব বেশি কথা তাকে বলতে হয়নি ৷ অল্প কিছু কথাই বলেছিলেন ৷ তবে কথা অল্প হলেও কথার মধ্যে ছিল যুক্তি, প্রাঞ্জলতা ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব ৷ যার ফলে ৭০দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কেবল দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল ৷
২০১৩সাল থেকে অদ্যাবধি সেই মামলাগুলোর ঘানি টেনে চলছি আমি ৷ মামলার কাজগুলো সানাউল্লা সাহেবের প্রতিষ্ঠান থেকেই পরিচালনা করা হয় ৷ অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ এবং অ্যাডভোকেট শাকিল আহমেদ রিপন আমার মামলাগুলো দেখে থাকেন ৷ মামলার কাজে মাঝে মাঝে সানাউল্লাহ সাহেবের অফিসে যেতে হয় ৷ তিনি অফিসে থাকলে তার সাথে দেখা করতাম ৷ মিষ্টি হেসে তিনি কুশল বিনিময় করতেন ৷ শান্তনার বাণী শোনাতেন ৷ সাহস যোগাতেন ৷ এভাবে নিরলস ভাবে আলেম-ওলামাদের আইনি সহায়তা দিয়ে বহু আলেমের মন জয় করেছেন ও দোয়া কুড়িয়েছেন ঢাকা মহানগর আইনজীবী সমিতির সাবেক এই নেতা ৷ আজ তিনি চলে গেছেন চির বিদায় নিয়ে ৷
বিগত দশ বছর সরকারী জুলুম-নীপিড়নের মুখে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে তিনি যেই সহায়তা দিয়েছেন, তাও এক কথায় অবিস্মরণীয় ৷ নীপিড়িত, হয়রানীর শিকার মানুষদেরকে এবং বিশেষ করে নবী-প্রেমের নিখাঁদ আন্দোলন হেফাজতে ইসলামের মামলায় আসামীদেরকে তিনি যেই আন্তরিকতায় অভূতপূর্ব সেবা দিয়েছেন, আল্লাহ তাকে এর উত্তম বিনিময় দিবেন বলে আমি আশাবাদী ৷
তিনি যেভাবে আল্লামা বাবুনগরীসহ আমাদের জামিন নিয়েছিলেন, তার জন্যও আল্লাহর মহান আদালতে আমরা জামিন চাই ৷ আমাদের এ আবেদন মঞ্জুর কর হে মহান আদালতের মালিক ! মরহুমকে দান কর মাগফেরাত ও চির সুখের জান্নাত !! আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন !!
(লেখক: বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি শাইখুল হাদীস মাওলানা মামুনুল হক)