আতঙ্কের মাঝেও করোনাভাইরাস নিয়ে ১৩টি স্বস্তির খবর
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগজনক সংবাদে বিশ্ববাসী অনেকটা ক্লান্ত। তবে এর মধ্যেও আমরা কিছু স্বস্তির খবর শুনাতে চাই।
কাতারভিত্তিক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার একটি ফিচারে করোনা ভাইরাস নিয়ে ১৩টি উপকারী তথ্য দেয়া হয়েছে।
এই সুসংবাদের উদ্দেশ্য এটি নয় যে, করোনার ভয়াবহতা কমে গেছে বা এটির প্রতি এখন আর গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। বরং সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সরকারের স্বাস্থ্যবিধি, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন মেনে চলতে হবে।
১. গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশ সুস্থ হয়ে যায় এবং কিছু মানুষের ভেতর ভাইরাস থাকা সত্ত্বেও কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার আগেই সে সুস্থ হয়ে যায়। ফলে বুঝাই যায় না যে, সে কখনও এই মহামারিতে আক্রান্ত ছিল।
২. এই ভাইরাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হলেও মোট মৃত্যুর হার কিন্তু অনেক কম। প্রায় ১ শতাংশ বা আরও কম। এটি গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সিন্ড্রোমের (এসএআরএস) রোগী ও ইবোলা রোগীর মৃত্যুরহারের তুলনায় অনেক কম। এসএআরএসের রোগীর মৃত্যুর হার প্রায় ১১ শতাংশ আর ইবোলা ৯০ শতাংশ।
যদিও মৃত্যুর হার গণনা একেক জনের কাছে একেক রকম। যেমন, স্পেনীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুসারে, ৭০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী করোনার রোগীদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ৫ শতাংশ, ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে ২.১৬ শতাংশ এবং ৪০ দশকে যারা রয়েছেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি মাত্র ০.৩ শতাংশ।
৩. শিশুদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম।
৪. ভাইরাসের প্রার্দুভাবের পর পরিস্থিতির গুরুতরতা সম্পর্কে বিশ্ব সম্পূর্ণরূপে অবগত। সে কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সরকারগুলো এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলছে।
৫. বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস কিভাবে মানব কোষগুলো সংক্রামিত করে তা খুঁজে পেয়েছেন। যা চিকিৎসা বিকাশে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
৬. উন্নত দেশগুলো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে। করোনাভাইরাসটির সম্ভাব্য চিকিৎসা এবং ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বেশ কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণে গবেষণা কাজকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
৭. জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আর্টুরো কাসাদেভালের মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে অ্যান্টিবডিগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো ঝুঁকিতে থাকা লোকদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যায়।
৮. অস্ট্রেলিয়ান গবেষক অধ্যাপক ক্যাথরিন কিডজারকা করোনাভাইরাসের জন্য দুটি ওষুধ পরীক্ষা করছেন। তারা নির্ণয় করতে পেরেছে, কিভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষণাটি নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।
৯. জাপানের একটি ওষুধ চীনের উহান এবং শেনজেনে ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরীক্ষার পরে ফেভিপিরাবির নামে পরিচিত করোনার কার্যকর চিকিৎসায় সাফল্য দেখিয়েছে।
১০. জার্মান সংস্থা করভ্যাকের প্রধান ফ্রাঞ্জ ফার্নার হাসি বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কয়েক হাজার মানুষ আগামী শরতে এই ভ্যাকসিনটি পেতে পারেন। তিনি আরও বলেন, সংস্থার বিজ্ঞানীদের অগ্রগতির হলে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো আগামী গ্রীষ্মে চালু করা হবে।
১১. চীন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পাঁচটি ভিন্ন ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং বলেছে যে এপ্রিলের মধ্যেই এটির একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে পারে।
১২. জার্মানিতে ট্রপিকাল মেডিসিন ইনস্টিটিউট মানব-পরীক্ষায় ক্লোরোকুইন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। যা ম্যালেরিয়ার ড্রাগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক পিটার ক্রেমসনার এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন যে ক্লোরোকুইন সম্ভবত করোনার ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
ক্রেমসনার আরও জানান, বিপুল সংখ্যক কোভিড -১৯ রোগী চীন এবং ইতালিতে ক্লোরোকুইন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।
১৩. যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ড্রাগ, রিমিজভির এশিয়ার ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোর ওপর চূড়ান্ত গবেষণা চলছে। চীনের চিকিৎসকরা বলেছেন যে এটি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।