কাবুল ছেড়েছেন পম্পেও, ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির কথা নেই
আফগানিস্তানের বিবদমান রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা তা না বলেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটি ত্যাগ করেছেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় পুরো বিশ্ব যখন শাটডাউন পর্যায়ে চলে গেছে, তখন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে মাইক পম্পেও অপ্রত্যাশিতভাবে সোমবার কাবুল সফর করেন। গত মাসে তালেবানের সাথে ওয়াশিংটন যে শান্তিচুক্তি সই করেছে, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
পম্পেও আলাদাভাবে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সাথে সাক্ষাত করেন। তিনি তালেবানের সাথে আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করার লক্ষ্যে আপসের আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তিচুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় এই আলোচনা।
তালেবানের সাথে চুক্তিতে আগামী ১৪ মাসে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলা আফগানিস্তান যুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তিটি সই করার পর থেকেই আফগানিস্তানের রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে শান্তিপ্রক্রিয়া স্থবির হয়ে রয়েছে। কে দেশটির প্রেসিডেন্ট হবেন, তা নিয়ে দেশটির নেতারা বিরোধে মত্ত রয়েছেন।
সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ঘানি ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ উভয়ে নিজেদের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। উভয়েই চলতি মাসে নিজ নিজ উদ্যেগে শপথ গ্রহণ করেছেন।
পম্পেও আফগান নেতাদের সাথে বসার আগে দুজনের সাথেই আলাদাভাবে বৈঠক করেন। তিনি এই দুজনকে একান্তে বসতেও বলেন।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ জাতীয় বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে। দেশটি তাদের প্রয়োজনীয় রাজস্বের মাত্র এক চতুর্থাংশ সংগ্রহ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিবদমান রাজনীতিবিদদের বিরোধ মেটাতে আর্থিক সুবিধারও প্রস্তাব দিয়েছেন পম্পেও।
রাজনৈতিক গোলযোগের ফলে তালেবানসহ আন্তঃআফগান শান্তি আলোচনার আয়োজন শুরু হতে পারছে না। একে শান্তিচুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
পম্পেওর সাথে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সঙ্কটে আছি। এই সঙ্কট দ্রুত সমাধান করতে না পারলে তা শান্তিপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তালেবানের সাথে আমাদের চুক্তিটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
আফগানিস্তান থেকে ইতোমধ্যেই সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। চূড়ান্ত প্রত্যাহার আন্তঃআফগান আলোচনার ওপর নির্ভরশীল না হলেও আফগানিস্তানে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে কাজ করতে না দেয়ার তালেবান প্রতিশ্রুতি পূরণ কঠিন করে তুলবে।
কিন্তু তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তি সই করার পরপরই আফগানিস্তানে নতুন করে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। ঘানি ও আবদুল্লাহ উভয়ে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। এর মধ্যেই ঘানি চুক্তি অনুযায়ী আটক ৫ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান। চুক্তিতে তালেবানেরও এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘানি সরকার বন্দীদের মুক্তি না দেয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
শান্তিচুক্তিটি যাতে বহাল থাকে, তা নিশ্চিত করতেই আফগানিস্তান সফর করেন পম্পেও। কিন্তু তাতে তিনি কতটুকু সফল হয়েছেন, তা বুঝা যাচ্ছে না।