কারাগারে আজহারের সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ, রিভিউ করার পরামর্শ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তার আইনজীবীরা।
আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করার বিষয়ে আইনি পরামর্শ করতেই তিন আইনজীবী সাক্ষাৎ করেন বলে জানিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠানোর পাঁচদিন পর শনিবার (২১ মার্চ) কাশিমপুর কারাগারে এটিএম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত করেন তার তিন আইনজীবী। তারা হলেন- অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। সাক্ষাতের বিষয়ে আইনজীবীরা জানান, এটিএম আজহারুল ইসলাম তাদের রিভিউ আবেদন করতে বলেছেন।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১৫ মার্চ প্রকাশ করা হয়েছে। এ রায় প্রকাশের পর ওইদিনই এর কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর পরোয়ানা প্রস্তুত করে গত ১৬ মার্চ বিকেলে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরোয়ানা পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। সেখানেই বন্দি এটিএম আজহারুল ইসলাম। এরইমধ্যে তাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নিয়ম অনুযায়ী সরকার এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সকল প্রস্তুতি নিতে পারবে। এটিএম আজহারও রিভিউ আবেদন করতে সময় পাবেন। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী গত ১৬ মার্চ থেকে ১৫ দিন সময় পাবেন এটিএম আজহার। এ সময়ের মধ্যে তাকে রিভিউ আবেদন করতে হবে। যদি রিভিউ আবেদন করেন সেক্ষেত্রে ওই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
আর যদি তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করেন তবে সেক্ষেত্রে দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো আবেদন না করেন তবে সাজা কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। আর রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের অপেক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এক রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার।
এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের সংখ্যা গরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগের বেঞ্চ। এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারকে গ্রেফতারের পর থেকে তিনি কারাবন্দি।