বন্দি জীবনে ‘মুক্তির আনন্দ’ মিলে না
সেই স্বাধীনতার মাস মার্চেই বেগম খালেদা জিয়া বন্দী। জীবন কাটাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়ালের ভেতরে। কারাবন্দী বেগম জিয়ার স্বজনদের কণ্ঠ থেকে এভাবেই আক্ষেপ ঝরছে। কারণ জেলকোড অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার সাথে নিয়মিত সাক্ষাতের অনুমতি থাকলেও তা পাচ্ছেন না স্বজনেরা। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে এই অভিযোগের কথা জানিয়েছেন তার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
(ষড়যন্ত্রমূলক) দুর্নীতির মামলায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি আছেন বেগম জিয়া। প্রথমে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রাখা হয়। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে তাকে কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকে রাখা হয়।
শনিবার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে বেগম জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, জেল কোড অনুযায়ী, একজন সাধারণ বন্দির সাথে পরিবারের সদস্য ও নিকটআত্মীয়দের যেভাবে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সেভাবে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিবার অনুমতি নিতে যাওয়ার সময় নানা ঝক্কি পোহাতে হয় তাদের । খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার অভিযোগ করেন, গত ৭ মার্চ তারা সর্বশেষ খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছিলেন। এরপর গত দু’দিন আগে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও এখনো অনুমতি মেলেনি।
শামীম ইস্কান্দারের বরাত দিয়ে শামসুদ্দিন দিদার আরো বলেন, জেলকোড অনুযায়ী, সাধারণত প্রতিমাসে দু’বার পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়রা দেখা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া ঈদের দিন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে সাক্ষাত পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের বেলায় অনেক ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনো রকম সহানুভূতি কিংবা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে কোনো সুবিধা তো দেয়াই হয় না, উল্টো অমানবিক আচরণ করা হয়।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আক্রান্ত ২০ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। এদের দু’জন সত্তোর্ধ্ব পুরুষ আর একজন ষাটোর্ধ্ব নারী। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৪ বছর। ভুগছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত তার পরিবার।
শামসুদ্দিন দিদার বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ জন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া কী অবস্থায় আছেন, তা জানার জন্য পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছেন। কিন্তু তারা জানতে পারছেন না, খালেদা জিয়া কেমন আছেন?
এ ব্যাপারে দু’বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। আইজি প্রিজনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের বিষয়ে যেন কোনো রকম হয়রানির শিকার না হন। কিন্তু তারপরও পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার অনুমতির বিষয়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রিয় মানুষদের একনজর দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের চার দেয়ালে তার দীর্ঘশ্বাসগুলো ফাঁক-ফোঁকর গলে বেরোনোর আপ্রাণ চেষ্টায় রত। দরজায় টোকা পড়তেই মুক্তবিহঙ্গের মতো উড়াল দিতে চান তিনি। আশার আলো খুঁজতে চান স্বজনদের মুখে। আর দীর্ঘশ্বাসগুলো খোলা দরজা পেয়ে মুক্ত হতে চায় আকাশে। আশার বার্তা নিয়ে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু বেলাশেষে বদ্ধ দরজা আর হাসে না। দীর্ঘশ্বাসগুলো তার মতোই বন্দি হয়ে থাকে হাসপাতালের চার দেয়ালে। প্রিয় মানুষদের এক ঝলক দেখে বন্দি জীবনে ‘মুক্তির আনন্দ’ মিলে না। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট (ষড়যন্ত্রমূলক) দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।