মার্চ ২১, ২০২০/প্রেসব্রিফিং —
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য —
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এখন সারাবিশ্বে মহামারী রূপ নিয়েছে। এই ঘাতক ভাইরাস চলে এসেছে বাংলাদেশেও। ক্রমশ: ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে চরম আতংক-উদ্বেগ। গত ৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসাবে ২০। তবে মৃত্যু ও আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)-এর পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক অতি মহামারী হিসেবে ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ তা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিলেও বর্তমান মিডনাইট সরকার যথাসময়ে করোনা বিপর্যয়কে গুরুত্ব দেয়নি। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য প্রায় দুই মাস সময় পেলেও সরকার এবিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে। এই অবহেলা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। সরকারের ক্ষমাহীন উদাসীনতা ও প্রাক-প্রস্তুতিহীনতার কারণে একটা বড় ধরনের বিপদ আমাদের সামনে ধেয়ে আসছে। ভাইরাসে সংক্রামকদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক শনাক্তকরণসহ চিকিৎসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোশাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি কোন কিছুই সরকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ঢাকার বাইরে কোন হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত বা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের থাকা-খাওয়া এবং আসবাবপত্র নেই। নেই চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় পোশাক ও ওষুধ। সেন্টারে নেই খাট, বেডসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।
ডাক্তাররা, বিশেষ করে আউটডোরে যারা চিকিৎসা দেন, সেই ইন্টার্নিরা ‘পিপিই’ পরিধান না করলে তারা নিজেরাই করোনা আক্রান্ত হবেন, আর একজন ডাক্তার আক্রান্ত হওয়া মানে শত শত নতুন রোগি সৃষ্টি করা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে নিরাপত্তা পোষাকের দাবীতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে কর্মবিরতী পালন করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নশীপ ডাক্তারগণ।
রাজশাহীর মতো প্রতিটি হাসপাতালে যারা জ্বর নিয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশের কোন হাসপাতালই জ্বরের রোগী ভর্তি করছে না, ফিরিয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পুরাতন শ^াসকষ্টজনিত রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, দেশের মধ্যে যাদের করোনা হয়েছে, তারা কোন হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমনকি জানতেও পারছেন না যে, এটা করোনাভাইরাস, না অন্যকিছু! কারণ করোনার টেষ্ট করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হাজার হাজার ব্লাড স্যাম্পল গেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরে। কিন্তু তাদের কাছে কোনো টেষ্টিং কীট নেই।
যে ১ হাজার ৭ শত টেষ্টিং কীট ছিল তার মধ্যে অনেকগুলো খরচ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টে নাটক করতে। বাকী যে কয়টা আছে, তা দিয়ে কি এমন হবে। হটলাইনের নামে এখন চলছে আইওয়াশ। রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট বা আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, গড়ে প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ জনের পরীক্ষা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে এপর্যন্ত মাত্র তিন শতাধিক জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে গত এক সপ্তাহেই প্রায় এক লাখ মানুষ দেশে এসেছেন এবং এর সাথে তুলনা করলেও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা নগণ্য। ১৭ কোটি মানুষের দেশে যেখানে কয়েক লাখ ‘পিপিই’ দরকার, বেড দরকার কয়েক হাজার, আইসিইউ দরকার, অক্সিজেন দরকার-সেখানে করোনা ধেয়ে আসছে জেনেও গত আড়াই মাসে তা প্রতিরোধে কিছুই করেনি সরকার।
অথচ সরকারের মন্ত্রীরা এতদিন ধরে বলে আসছিলেন, করোনা প্রতিরোধে উন্নত দেশের চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশে। কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ গোয়েবলসীয় কায়দায় বলেছিলেন, করোনা নাকি বিএনপির অপপ্রচার। গতকাল ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কের মতো পরিস্থিতি হয়নি, করোনার চেয়েও আমরা শক্তিশালী’। এই সমস্ত কথাবার্তা বৈশি^ক বিপদের মুখে মানুষের সঙ্গে মশকরা করার সামিল।
বন্ধুরা,
বাংলাদেশ এখন করোনার ইন্টারন্যাশনাল ডাম্পিং স্টেশন। এয়ারপোর্ট এখনও খোলা। দু’মাস ধরে ইটালি ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আক্রান্ত রোগীরা ফিরে সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। সরকারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হোম কোয়ারেন্টাইন নামেমাত্র-বেশির ভাগ লোকই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াচ্ছে, পিকনিক করছে, হাট বাজারে ঘুরছে। অর্থাৎ তারা উৎসব করে গোটা দেশে ছড়াচ্ছে ভাইরাস। সরকারী হিসাবে ২১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৫৫ দিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ ইতালিসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন।
দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর দিয়ে তারা এসেছেন। এসব বন্দরে তাদের স্বাস্থ্যগত স্ক্যানিং করা হয়েছে বলে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দাবী করলেও থার্মাল স্ক্যানার কম থাকায় অনেকে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই নিজ নিজ বাড়িতে গেছেন। অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করে বলছেন, দেশে প্রত্যাগত প্রবাসীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চঝুঁকি রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ সতর্কতার পরও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। এখন প্রবাসীদের ধরতে শুরু হয়েছে অভিযান। কথা হলো আগে থেকে পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই সময়ের দাবি সকল আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা। এখন লকডাউন করে কি আর থামানো যাবে ?
সুপ্রিয় সচেতন সাংবাদিকবৃন্দ,
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ঘটবে তা নিয়ে সকলেই শংকিত। যেহেতু সবকিছু শাটডাউন করার পর্যায়ে চলে গেছে সেক্ষেত্রে এর পরিণতি আমরা জানি না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলেছে, করোনা যদি কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে বাংলাদেশ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অথচ সরকার এনিয়ে কোন পুর্ব প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। কারণ জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এমন ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সক্ষমতা এবং শক্তি এই সরকারের নেই। জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করে করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ সামাল দিতে হবে।
এই মহাবিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে। অবিলম্বে চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে জাতীয় দুর্যোগে সবাই এক হয়ে কাজ করা জরুরী। জাতির এই মহাক্রান্তিকালে প্রতিহিংসাপরায়ণতা ভুলে এই মূহুর্তে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুন। জনগণের নেত্রীকে জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দিন।
সুহৃদ সাংবাদিক বন্ধুগণ,
করোনা আতংকে মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল-ডাল-পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইচ্ছে মতো বাড়িয়ে দিয়েছে। দামের উল্লম্ফনে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই! কালোবাজারী, মজুদদারি ও প্যানিক সেল চলছে বেপরোয়াভাবে। সরকার বলছে ব্যবস্থা নিবে! কবে নিবে ? জনগণকে মূমুর্ষ করে ? ৫০ টাকার মিনিকেট চাল একদিনেই হয়েছে ৬২ টাকা, ৪০ টাকার পিঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা, ৯৫ টাকা ডজন ডিম ১২০ টাকা, ১পিচ ১৫ টাকার লেবু এখন ৪০ টাকা, ২২০ টাকা রুই ৩২০ টাকা। প্রতিটি জিনিসের দামে আগুন যেন দাউদাউ করে জ¦লছে। এই সরকার সকল দিক দিয়ে ব্যর্থ। অবৈধ ক্ষমতার দম্ভে বেপরোয়া কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা,
বাংলাদেশ ব্যাংক বড়লোকের ঋণকিস্তি স্থগিত করেছে কিন্তু গরীবের ঋণকিস্তি স্থগিত করেনি। অবিলম্বে গরীবের সকল ঋণকিস্তি স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপদ পোষাক সরবরাহ করে সকল হাসপাতালে চিকিৎসা চলমান রাখার আহবান জানাচ্ছি। ভাইরাসে সংক্রামকদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক শনাক্তকরণসহ চিকিৎসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোশাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে করোনা আক্রান্তদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি করছি।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
আজ ঢাকা- ১০ আসনে জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নিন্মবর্নিত নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
১. হাজারীবাগ থানা বিএনপি’র সহ সভাপতি- হেদায়েত উল্লাহ
২. হাজারীবাগ থানা যুবদলের সভাপতি- আবুল খায়ের লিটন
৩. হাজারীবাগ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক- মোঃ সুমন
৪. হাজারীবাগ থানা যুবদল সদস্য- মোঃ সেলিম
৫. হাজারীবাগ থানা যুবদল সদস্য- সাইদুল ইসলাম শিশির
৬. হাজারীবাগ থানা যুবদল সদস্য- আমির হোসেন লিটন
৭. ওয়ার্ড যুবদল নেতা- মোঃ শিমুল
৮. বিএনপি সমর্থক- জাকির
৯. ধানের শীষের এজেন্ট- এ্যাড. মাসুম
রাজশাহী জেলা:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কর্তৃক প্রচারিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত লিফলেট বিতরনের পর রাজশাহী জেলাধীন বাঘা উপজেলা বিএনপি নেতা- বাবুল ইসলাম ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক- আব্দুল লতিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও ফজলুর রহমান বাবুল, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফিরোজ আহম্মেদ রঞ্জু, শফি আহম্মেদ, ফিরোজ আহম্মেদ, সালে আহম্মেদ সালাম, সুরুজ মিয়া, জুয়েল খান, রেজাউল হক হীটু ও শাহিন মন্ডলসহ অজ্ঞাত ৬/৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক লিফলেট বিতরন উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।