করোনা মোকাবেলায় রাজনৈতিক ঐক্য চায় বিএনপি, সিদ্ধান্ত নিতে আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক
দলটি সম্মিলিতভাবে এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের কাছ থেকে রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান আশা করছে। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে বিএনপিই রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিবে। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ গুলশানস্থ চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সংকট মোকাবেলায় বিগত সময়ে রাজনৈতিক ঐক্যের উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা আসেনি। করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারকে ব্যর্থ বলছে বিএনপি, আর ক্ষমতাসীনরা বলছে এ নিয়ে রাজনীতি করছে বিএনপি। বর্তমানে সংকট চরম আকার ধারণ করায় বৈশ্বিক এ মহামারি মোকাবিলায় রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আশা করছেন।
এ বিষয়ে গতকাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক সংকট। ক্ষমতাসীনরা শুরু থেকে এ সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ। কিন্তু আর নয়। সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিএনপি কাজ করছে। দেশ ও মানুষের স্বার্থে সত্যিকার অর্থে চলমান সংকট মেকাবিলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করবে এমনটাই বিএনপি আশা করে।
দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা আলাপকালে গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার শুরু থেকেই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। এখন এ সংকটের হাত থেকে কিভাবে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায়, তা নিয়েই বিএনপি ভাবছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য বিএনপি প্রস্তুত।
সংকট মোকাবেলায় সুপারিশ আকারে সরকারকে কিছু প্রস্তাবনা দেয়ার কথাও ভাবছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে, সমন্বয়হীনতা দূর করে সব সেক্টরের মানুষ নিয়ে দ্রুত টাস্কফোর্স গঠন, বিদেশফেরত মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করা এবং প্রয়োজনে ভারতের মতো প্রত্যেক বিদেশ ফেরতের হাতে অমোচনীয় কালির সিল দেয়া। জনগণকে সচেতন করে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ উপ-নির্বাচনসমূহ স্থগিত করা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ শক্তভাবে প্রয়োগ করা। আদালত বন্ধ করা, বস্তিবাসীদের করোনা নিয়ে সচেতন করতে আলাদা টিম গঠন করা এবং সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুব দ্রুত স্বতন্ত্র হাসপাতাল তৈরি করে তাদের পরীক্ষা করা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট দ্রুত বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং তা মানুষের জন্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা। সারাদেশে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর জন্য পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট অতি দ্রুত সরবারহ করা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ করোনা সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার সব ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটগুলো প্রস্তুত রাখা। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড এবং ভেন্টিলেটর বৃদ্ধি, করোনা সংশ্লিষ্ট সেবাদান করার জন্য প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্য উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ওপর থেকে সব রকমের শুল্ক তুলে নেয়া। এছাড়া কোনও এলাকা লক ডাউন করতে হলে সেখানকার প্রান্তিক মানুষের খাবারের দায়িত্ব গ্রহণ করা। গার্মেন্ট শিল্প রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে রিকশাচালক, দিনমজুর, শ্রমিক, বাসার গৃহকর্মী, পরিবহণকর্মী, ফেরিওয়ালাসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও গণ-পরিবহণ ও টাকাকে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়েও সরকারকে নজর দেয়ার সুপারিশও করা হবে।