কোয়ারেন্টাইন ও মসজিদে জামাত প্রসঙ্গে ইসলাম
দুনিয়াব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ব্যক্তি এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। করোনার কারণে ইতিমধ্যে সৌদি আরব বিদেশিসহ নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নফল ওমরাহ বন্ধ ঘোষণা করেছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিসহ সৌদি আরবের সব মসজিদে নামাজের জামাত স্থগিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরবের মসজিদগুলোতে শুধু আজান হবে এবং নামাজ বাড়িতে পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠন দ্য কাউন্সিল অব স্কলার্স এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিয়াদে ওই কাউন্সিলের ২৫তম বিশেষ জরুরি অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে মসজিদগুলোতে নামাজ বন্ধ থাকলেও আগের মতো নিয়মিত আজান হবে। জ্যেষ্ঠ আলেমদের কাউন্সিলের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদপত্র সৌদি গেজেট জানিয়েছে, যেকোনো বড় বিপর্যয়ে সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী মসজিদে জুমাসহ সব ধরনের নামাজের জামাত বন্ধ রাখার সুযোগ আছে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ভারী বৃষ্টির দরুন মসজিদে জামাত আদায় না করে বাড়িতে পড়ার দৃষ্টান্ত আছে। ইসলাম বাস্তবতা বুঝে সেই বাস্তবতার আলোকে চলতে বলে। এ যুক্তিতেই আজানে নামাজের জন্য আহ্বান জানানো এবং ‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম’ বলে ঘরে বা বাড়িতে নামাজ পড়ার উৎসাহ দেওয়াকে সমর্থন করা যায়। কারণ মানুষের নিরাপত্তা, জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানকে ইসলাম অবশ্যই গুরুত্ব দেয়। আর বাস্তবতার আলোকে এসব বিষয় অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও মানুষের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সতর্কতার লক্ষ্যে বিদেশফেরত, জ¦র, হাঁচি ও কাশিতে আক্রান্ত এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের মসজিদে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, মরক্কো, থাইল্যান্ড ও আরব আমিরাতসহ অনেক মুসলিম দেশে জুমার নামাজের খুতবা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এবং যারা মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ পড়তে চান তাদের তা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মসজিদের পরিবর্তে খোলা জায়গায় নামাজের জামাত হচ্ছে। করোনার বিষয়ে ভয় না পেয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার সম্পর্কে আলোকপাতও করেছেন। কোনো এলাকায় বা দেশে যদি কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ হলো, সেখানকার অধিবাসী যেন অন্যত্র না যায়, এর ফলে অন্যত্রেও তা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন‘যখন কোনো এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)। তাই এ বিষয়ে সবার সতর্কতা প্রয়োজন। এ হাদিসের আলোকে বলা চলে মহামারীর কালে কোয়ারেন্টাইন কিংবা সঙ্গনিরোধের ধারণা ইসলাম অবশ্যই সমর্থন করে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
আরেকটি বিষয়, সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ড বর্তমান মহামারী অবস্থায় সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া, জামাতে নামাজ আদায় কিংবা জুমার নামাজে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া দিয়েছে। ওই ফতোয়াও আমাদের পালন করা দরকার। ফতোয়ায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশে মসজিদ ও জামাতে নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চার কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মসজিদে নামাজ না পড়ে নিজ ঘরে নামাজ আদায় করবেন। জুমার নামাজে জামাত না হলে নিজ ঘরে জোহরের চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
প্রথম অবস্থা : কেউ যদি এই মহামারী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তার জন্য মসজিদে গমন বা জামাতে গিয়ে নামাজ আদায় করা হারাম।
দ্বিতীয় অবস্থা : কেউ যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকেন এবং তার জন্য অন্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে মসজিদে গমন থেকে বিরত থাকা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চলা ওয়াজিব।
তৃতীয় অবস্থা : কেউ যদি অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় করেন, তাহলে তার জন্য নিজ ঘরে নামাজ পড়ার অবকাশ রয়েছে। চাইলে জামাতে না গিয়ে ঘরে নামাজ আদায় করে নিতে পারেন।
চতুর্থ অবস্থা : কেউ পূর্ণ সুস্থ-সবল আছেন, কোনো ধরনের আশঙ্কা কিংবা আতঙ্ক নেই। কিন্তু সরকার মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা নামাজ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বাধ্যবাধকতা মেনে নেওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই।
শাহীন হাসনাত : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক