অনুমতি পেলে স্বল্প খরচে করোনা পরীক্ষার কিট বানাবে গণস্বাস্থ্য

0

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘স্বল্প খরচে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট তৈরি করতে সক্ষম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এখন প্রয়োজন সরকারের অনুমতি। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পেলেই আমরা  কিট তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করব। সব মিলিয়ে উৎপাদন করতে এক মাস সময়ের প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে আমরা ১০ হাজার ভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এক মাসে ১ লাখ কিট তৈরি করা সম্ভব। আইইডিসিআরের কাছে এ কিট আছে মাত্র ১ হাজার ৭০০ পিস। এগুলো সরবরাহ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’ গতকাল সন্ধ্যায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে অনুমোদনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই এক মাসের মধ্যেই আমরা বিপুল পরিমাণে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এ কিট মাত্র ২০০-২৫০ টাকায় সরবরাহ করতে পারবে। তবে অনুরোধ, সরকার যেন জনসাধারণের কাছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় এ কিট ছড়িয়ে দিতে পারে। সেখানে যেন বড় আকারে কোনো ট্যাক্স বসানো না হয়।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের টেস্ট কিট উৎপাদনের জন ফেব্রুয়ারিতেই কাজ শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। করোনাভাইরাস ডায়াগনোসিস করার একটি পদ্ধতির নাম হলো রিভার্স ট্রান্সকিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (RT-PCR)। বাংলাদেশে এ ধরনের পদ্ধতিতে ডায়াগনোসিস করা কষ্টসাধ্য। কারণ এর জন্য খুব দক্ষ জনবল ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাব প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে ডায়াগনোসিস করতে কয়েক ঘণ্টা থেকে দুই দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এ ছাড়া আরেকটি ডায়াগনোসিস করার পদ্ধতির নাম অ্যান্টিবডি অ্যাসে। এ পদ্ধতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের সুদক্ষ টিম এ কিটের ডিজাইন ও উৎপাদনের কাজ করছে। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের ডায়াগনোসিস কিট (SARSPOC kit) তৈরির সময় সিঙ্গাপুরে কাজ করেছেন ড. বিজন কুমার শীল। তিনিই গণস্বাস্থ্যের এ টিমের অধিনায়কত্ব করছেন। এ কিট তৈরির জন্য বিএসএল টু প্লাস (BSL 2+) ল্যাব তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর জন্য রি-এজেন্ট ও ইকুইপমেন্টও জোগাড় করা হচ্ছে। এ কিট উৎপাদনে অন্যদের মধ্যে কাজ করছেন ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রঈদ জমির উদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা জানান, এ ধরনের কিট উৎপাদন করতে হাইটেক ল্যাব প্রয়োজন। ইতিমধ্যে গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক একটি হাইটেক ল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। করোনার আগের রূপ SARS-COV-2 নভেম্বর ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮৪ বারের বেশি তার জিনের গঠন পরিবর্তন করেছে। নতুন স্থানে নতুন পরিবেশে টিকে থাকতে এ ভাইরাস তার জিনের গঠন পরিবর্তন করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ তাদের প্রয়োজনে করোনাভাইরাসের কিট তৈরি করলেও বাংলাদেশে এমন কাজ অন্য কেউ এখনো করেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য-আরএনএবায়োটেক লিমিটেড বাংলাদেশের মানুষের জন্য কভিড-১৯-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য পিওসি (POC-point-of-care) কিট ডেভেলপের চেষ্টা করে আসছে।

 তিনি বলেন, যে পদ্ধতিতে এ কিট তৈরি করা হবে তাকে বলা হয় ‘ডট ব্লট টেকনোলজি’। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এ কিটে ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। এজন্য স্পুটাম নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে সন্দেহভাজন ব্যক্তির রক্তের নমুনা নেওয়া হবে। সে রক্ত থেকে ‘সিরাম’ আলাদা করতে হবে। কিটে সেই সিরাম রেখে তার ওপর অ্যান্টিজেনের বিক্রিয়া ঘটানো হবে। যদি বিক্রিয়া হয় তাহলে সন্দেহভাজন ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের প্রাথমিক উপস্থিতি রয়েছে বলে প্রমাণ হবে। বিক্রিয়া না করলে তিনি আক্রান্ত নন বলে বিবেচিত হবেন। ইতিমধ্যে এ ডট ব্লট পদ্ধতি ব্যবহার করে চীন ও আমেরিকায় কিট তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com