করোনাভাইরাস : লুটপাট ঠেকাতে আগেভাগে বন্দুক কেনার হিড়িক
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার হিড়িক পড়েছে। অস্ত্র কিনতে দোকানের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে লুটেরাদের উদয় হবে। তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্র কিনে রাখছেন তারা।
সবরবারাহ কম থাকায় কিছু খুচরা বিক্রেতা সেভাবে অস্ত্র বিক্রি করছেন না। আর এ কারণে দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার পাশাপাশি অনলাইনেও অর্ডার দিয়ে অস্ত্র কিনছেন অনেকে।
ইউএসএ টুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার (১৫ মার্চ) ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটিতে দেখা যায়, মার্টিন রেটিং গানস নামের এক অস্ত্রের দোকান খোলার আগেই বাইরে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা।
লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা ড্রিউ প্লোটকিন বলেন, সবাই ভয় পাচ্ছে। সারা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এ রকম বাজে পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চাইছে সবাই।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৪৩ জন। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেরি হলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪৯টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। দেশটির পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইউএসএ টুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে লুটপাট বাড়বে। এ কারণে তারা অস্ত্র মজুত রাখা শুরু করেছেন।
ক্রেতাদের ভিড় দেখে তিনিও জার্মানাটাউনের একটি দোকান থেকে দেড় হাজার ডলার ব্যয়ে অস্ত্র কিনেছেন দেশটির উইসকনসিন রাজ্যের ৭১ বছর বয়সী বাসিন্দা রালফ ক্যারেট। তিনি বলেন, এখন জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে হবে।
করোনা মহামারি এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রতি বর্ণবাদ ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এশিয়ান ক্রেতারা বেশি অস্ত্র কিনছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান গ্যাব্রিয়েল শহরের অস্ত্র ব্যবসায়ী ডেভিড লু বলেন, এটা এক ধরনের পাগলামি। গত ৩ ও ৪ মার্চ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি তাদের আগ্নেয়াস্ত্র পরীক্ষার জন্য আমার দোকানে এসে প্রত্যেকে একটা করে বন্দুক কিনে নিয়ে যান। তবে বেশি অস্ত্র কিনছেন এশিয়ানরা। কারণ তাদের মধ্যে বেশি ভয় কাজ করছে বলে জানান ডেভিড লু।
ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক অস্ত্র ব্যবসায়ী ডেনিস লিন বলেন, আমিও বেশ কয়েকজন এশিয়ান-আমেরিকানকে অস্ত্র কিনতে দেখেছি। মানুষ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ছে। তারা ভুলে যাচ্ছে, আমরা মানুষ। আর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আছি, চীনে নয়।
চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ১৬৩ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৭ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৮। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বিশ্বের ৮০ হাজার ৮৭৪ জন রোগী।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রায় দুই মাসের জন্য সব ধরনের জনসমাগম বা অনুষ্ঠান বাতিলের পরমর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য ও শহরে ক্যাফে, বার বা রেস্টুরেন্টে জনসমাগত সীমিত করা হয়েছে। অন্তত ৩২টি রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
করোনা আতঙ্কে লাস ভেগাসের বেশ কিছু রিসোর্ট, ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের সব নাইটক্লাব, মুভি থিয়েটার ও কনসার্ট ভেন্যু বন্ধ করে দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, সেখানকার রেস্টেুরেন্ট, বার ও ক্যাফেগুলো থেকে খাবার শুধু ডেলিভারি নেয়া যাবে, কেউ জায়গাগুলোতে বসে খেতে পারবেন না।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন।