৫ টাকার মাস্ক ৫০ টাকায়ও মিলছে না, হঠাৎ শঙ্কট হ্যান্ড স্যানিটাইজারে
চীন থেকে অন্যান্য দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে বাংলাদেশের বাজারে মাস্কের এক ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট শুরু হয়েছে। এবার দেশেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন শনাক্ত হওয়ার খবরে মুহূর্তে চাপ পড়ে মাস্কের বাজারে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত হওয়ায় নাকমুখ ঢেকে রাখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। তবে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আতঙ্কিত অনেকেই মাস্ক কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এতে করে রাজধানীর সব ফার্মেসিসহ বিভিন্ন স্টেশনারি দোকানগুলোতে মাস্ক নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিছু ফার্মেসিতে মাস্ক থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। সুপার শপগুলোতেও ঘুরে দেখা যায়, হাত ধোয়ার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশের দামও বেড়েছে। এই সুযোগে প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা তুলে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই মুর্হূতে মাস্ক তেমন প্রয়োজন নেই। মাস্ক নিয়ে হুলস্থুল না করে জনগণের উচিত হবে, যত্রতত্র থুথু না ফেলা, গণপরিবহন, বাজার ও সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলা।
গত রবিবার বিকেলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তিনজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্তের তথ্য জানানোর পর থেকেই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড। সুযোগে বুঝে মাস্কের দামও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনের ফার্মেসির মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মাস্কের জন্য ভিড় করছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ দোকানদার বলছেন, তাদের দোকানে মাস্ক নেই। দুয়েকটি দোকানে থাকলেও তা নিয়ে কাড়াকাড়ি চরমে। পাঁচ টাকার মাস্ক এখন ৫০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। দোকান মালিকরা বলছেন, মাস্ক সংকট আগে থেকেই। তার ওপর বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মাস্কের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে খুব কম সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যটির যোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
কারওয়ান বাজারের মাস্ক বিক্রেতা রিউয়াজুল মিয়া বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টা বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন কম হলেও ২০০ মাস্ক বিক্রি করি।’ দাম কেন বেশি নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বেশি দামে কিনি, বেশি দামে বিক্রি করি। মার্কেটে তো পাওয়াই যায় না। আগে ৪০ টাকায় ফিল্টার মাস্ক বিক্রি করতাম আর এখন সেটা কিনতেই হচ্ছে ১০০ টাকায়।’
সামিউল হক চৌধুরী নামের একজন শ্যামলীর পাঁচটি ওষুধের দোকান ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাননি। মার্কেট আউট বলে জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা। সামিউল বলেন, ‘এসব দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর মাস্কের জন্য যে পরিমাণ ভিড় দেখলাম তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষ আতঙ্কিত।’
রাজীব আহমেদ নামের আরেকজন বলেন, ‘স্যানিটাইজার নামের হাত ধোয়ার যে জিনিসটি এতদিন বিক্রি হয়নি, তা এক গতকাল (রবিবার) বিকেলে হঠাৎ মার্কেট আউট হয়ে গেছে। পাঁচ টাকার ফেস মাস্ক এখন ৫০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।’
মাস্কের বাজারে এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ ভবন দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াইনি। বরং মাস্কের চরম সংকট। এটা তো আজকের বিষয় না। আমরা গত দুই মাস ধরে বাজারে মাস্ক সংকটের কথা বলে আসছি।’
রিয়াজুল বলেন, ‘আমাদের দেশে অধিকাংশ মাস্কই আসে চীন থেকে। সেখানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মাস্ক আমদানি প্রায় বন্ধ। দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানি মাস্ক তৈরি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তারা যোগান দিতে পারছে না। ফলে দাম তো কিছুটা বেড়েছে। তবে আমি বলবো, মাস্ক শুধু সংকটই নয়, মহাসংকটেরও বড় কিছু।’
এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যেককে এখনই মাস্ক পরে ঘুরতে হবে, এমন পরিস্থিতি হয়নি। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘এই ভাইরাস যেন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, আমরা সে ব্যবস্থা নিতে পারব বলে আশাবাদী। এ বিষয়ে আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা মনে করছি না, এই ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আমরা হাসপাতালগুলোতে আইসোলেটেড ইউনিটের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আইসোলোটেড হাসপাতাল করা যায় কীভাবে, আমরা তা দেখছি। শুধু হাসপাতাল নয়, স্কুল-কলেজ বা অন্য কোথাও হাসপাতাল স্থাপন করা যায় কি-না, সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯-এর লক্ষণ (বিশেষ করে কাশি) দেখা দিলেই কেবল মাস্ক পড়ুন। এছাড়া কোভিড-১৯ থাকতে পারে- এমন কারও সংস্পর্শে থাকলেও মাস্ক পড়ুন। ডিসপোজাল ফেস মাস্কগুলো একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। অসুস্থ না হলে বা অসুস্থ কারও দেখাশোনার দায়িত্বে না থাকলে মাস্কের ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপীই মাস্কের সংকট রয়েছে। তাই উপযুক্ত কারণ না থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করাই ভালো।