‘করোনা’ প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখছে হাইকোর্ট, গুচ্ছ নির্দেশনা
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে মাস্ক, সেনিটাইজার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে পেঁয়াজের মতো ‘অনৈতিক ব্যবসা’ যাতে না হয় সে জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে এ নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার সচল রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৫ মার্চ এ-সংক্রান্ত শুনানিতে করোনা নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চায় হাইকোর্ট। আইনজীবী ইশরাত হাসান এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে এ বিষয়ে নির্দেশনা চান। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিলকৃত পাঁচ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি গতকাল আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
প্রতিবেদনে করোনা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে বলা হয়, দেশের সব বন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করার পাশাপাশি এ ভাইরাস-সংক্রান্ত সতর্কতামূলক বার্তা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেব্ল টিভি ও পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট ও সব বেসরকারি হাসপাতালে এ-সংক্রান্ত সেল গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুনানিকালে আদালত বলে, ‘এখন পর্যন্ত সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এটি একটি জনবহুল দেশ। আমরা কেউ নিরাপদ নই। এর কোনো প্রতিষেধক নেই। ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এ নিয়ে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।’
আদালত আরও বলে, ‘মাস্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। মাস্কের জন্য মানুষ দোকানে লাইন দিচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও একটি মাস্ক ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটি দুঃখজনক। এই সুযোগে মাস্ক, সেনিটাইজারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে বাজারে পেঁয়াজের মতো অনৈতিক ব্যবসা হয় কি না, কেউ সিন্ডিকেট করে কালোবাজারির মাধ্যমে মজুদ করে কি না, সেটি লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট ব্যবহার করতে হবে।’
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে দুটিই নষ্ট থাকায় এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলে, এক-দেড় মাস হয়ে গেছে। এখনো স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া চলছে। অবিলম্বে সেখানে পর্যাপ্ত স্ক্যানার চালু করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত স্ক্যানার সচল থাকার কথা বলে আদালত।
করোনা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি না করে সচেতনতার পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্ট বলে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটর (আইইডিসিআর) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ব্রিফিং করেন। কিন্তু তার বক্তব্য শুনে মনে হয় করোনা এখানে ধেয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য আরও ইতিবাচক হওয়া বাঞ্জনীয়। কোনোভাবেই যেন এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি না হয়। মানুষ কীভাবে সচেতন হবে এ নিয়ে কথা বলা উচিত। গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে মানুষকে সচেতন করা।
আদালত বলে, যারা বিদেশ থেকে আসেন তাদের কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ননএ-সংক্রান্ত নিশ্চয়তা সনদ বিভিন্ন বন্দরে নিশ্চিত করতে হবে। শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করে।