তেল নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি-রাশিয়া
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তেল উৎপাদন বাড়ানো-কমানো নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে শীর্ষ দুই উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ সৌদি আরব ও রাশিয়া। একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তেল তুলছে দেশটি। সেই সঙ্গে চলছে ‘দরযুদ্ধ’।
ফলে রেকর্ড দরপতন ঘটেছে বিশ্ববাজারে। তেলের দাম এখন গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ধাক্কা লেগেছে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়াসহ বিশ্ব পুঁজিবাজারেও। বড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে তেল রফতানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র।
তেলের দরপতনে আর্থিক মন্দায় পড়তে পারে দেশটি। ফলে মাটি হয়ে যেতে পারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফের ক্ষমতার আসার স্বপ্ন।
তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমিয়ে আনার বিষয়ে আগেও ওপেক ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে এই দ্বন্দ্বের শুরু। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় শুক্রবার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সৌদি আরবের নেতৃত্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক দেশ রাশিয়ার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে ১৪ সদস্যের ওপেক।
বৈঠকে মস্কোকে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে যত খুশি তেল উৎপাদনের নির্দেশ দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ।
তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে মস্কোর অনড় অবস্থানের পাল্টা জবাবে কঠোর অবস্থান নেয় সৌদিও। চীনা ক্রেতাদের জন্য তেলের দাম ৬ থেকে ৭ ডলার কমিয়ে দেয় রিয়াদ। শুধু তাই নয়, দৈনিক নিয়মিত উত্তোলনের চেয়ে আরও ২০ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তোলার ঘোষণা দেন সৌদরা।
করোনাভাইরাসের কারণে তেলের চাহিদা আগেই নিম্নমুখী ছিল। সৌদ ও রুশদের এই তেল দ্বন্দ্বের ফলে রাতারাতি তেলের বাজারে প্রবল ধস নামে। শুক্রবার বৈঠকের ব্যর্থতার পরই তেলের দাম ১০ শতাংশ কমে।
গত সোমবার এশিয়ায় অপরিশোধিত তেল ব্রেন্টের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৩৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম কমেছে ৩৪ শতাংশ। প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়ায় ২৭.৩৪ মার্কিন ডলারে, যা দেশটির গত চার বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ২৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৩.৪৭ মার্কিন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম তেলের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সারাবিশ্বেই পুঁজিবাজারে দফায় দফায় সূচক কমে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার এশিয়া দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রধান তেল আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত।