আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের দরজা খুলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

0

কাতারে এক বছরের বেশি সময় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি চুক্তিতে সই করেছে। আল-কায়েদা ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সাথে তালেবানের সম্পর্ক ছিন্ন করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে দেশটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু কথিত এই ঐতিহাসিক চুক্তির কালি শুকানোর আগেই বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ের শুরু হয়ে গেছে।

প্রথমে আফগান সরকার বলে যে তালেবান ও কাবুলের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে ৫০০০ তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। তারপর পূর্ব আফগানিস্তানে একটি বোমা হামলায় সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র একে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি। জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলে বলেন, আফগানিস্তানে সহিংসতা শূন্যে নামছে না।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকে ভুণ্ডল করতে চায় না। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার একটি সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনী বছরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে পারবেন যে তিনি আমেরিকান সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। তারা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের পর কিভাবে দেশে ফিরল এবং তাদের ফেরত যাওয়ার পর দেশটির কী হাল হলো তা গৌণ বিষয়।

শান্তিচুক্তিটি বাস্তব কিছু নয়। এটি ভুতুরে বিষয়। এটি আফগানিস্তানকে আরো নিরাপদ করবে না। বস্তুত, তালেবানের বিজয় নিশ্চিত করার দরজা খুলে দিয়েছে আমেরিকা।

এই সঙ্ঘাতের একেবারে শুরু থেকেই তালেবানের হাতে ছিল একটি বিশাল কৌশলগত সুবিধা। তা হলো ধৈর্য। তারা জানত কিভাবে তাদেরকে অনেক বছর যুদ্ধ করে যেতে হবে। কারণ আফগানিস্তান তাদের দেশ। দুই দশক ও তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধীনে তালেবান তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। পাশ্চাত্যের প্রতিটি ভুল, প্রতিটি বেসামরিক মৃত্যু, প্রতিটি বিমান হামলা, প্রতিবার কাবুল সরকারের নীরবতা, তালেবানের শক্তি বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুনঃ আফগান শান্তিচুক্তি রক্ষায় কূটনৈতিক উদ্যোগ

সবশেষে যুদ্ধ অচলাবস্থায় উপনীত হয়। কোনো পক্ষই সুস্পষ্ট বিজয় লাভ করতে পারছিল না। তবে তারা যখনই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আলোচনার টেবিলে গেল, তখনই তালেবান তারা যা চায় তা পাওয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করল। সবকিছুই হয়েছে ধৈর্য ধারণ করায়।

প্রথমে আমেরিকানরা তালেবানের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর তারা একইসাথে তালেবান ও আফগান সরকারের সাথে আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। তারপর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির মূলা ঝুলায়। এখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে, আফগান সরকারকে অসহায় রেখে। আর তালেবান বাহিনী ২০০১ সালের পর এখনই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।

কী ঘটছে তা নিয়ে একটি কথা আছে, কিন্তু কেউ তা বলবে না।

কোনো জোরালো রাজনৈতিক চুক্তি বা এমনকি একটি পরিকল্পনা ছাড়াই আফগানিস্তান ত্যাগ করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বিশাল পুরস্কার তালেবানের হাতে তুলে দিচ্ছে। প্রথমত প্রপাগান্ডা বিজয়; তালেবান তাদের দেশ থেকে বিদেশী সৈন্যদের বিতাড়িত করার দাবি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিদেশী সৈন্যদের চলে যাওয়ার ফলে কাবুল সরকার অনেক দুর্বল হয়ে পড়ল। মার্কিন উপস্থিতি কাবুলকে সুবিধা দিয়েছিল। এখন তালেবান আরো শক্তিশালী হয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করতে পারবে।

অনিবার্যভাবেই ছাড়েও জিতবে। কাবুল সরকারকে কোনোভাবেই অংশীদার কিংবা মিত্র বা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও স্বীকার করবে না তালেবান। অন্যদিকে তারা বলে আসছে যে বিদেশী সৈন্যরা বিদায় নেয়ায় কাবুল সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তার ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে। কাবুল প্রশাসনকে মারাত্মক নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে শান্তিচুক্তি।

এমন আশঙ্কাও রয়েছে যে যারা পাশ্চাত্যের হয়ে কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে তালেবান। আর তা হবে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার আগেই।

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির বিরোধিতা করবে না আঞ্চলিক দেশগুলো

আফগানিস্তান একটি জটিল দেশ। এর জাতিগত, ধর্মীয় ও ভৌগোলিক পার্থক্য রয়েছে। ভবিষ্যতের সরকারে এর প্রতিফলন হতে হবে। আলোচনা কয়েক বছর গড়াতে পারে। আর এ সময় তালেবানের সশস্ত্র অভিযানও চলবে। এমন সম্ভাবনাও আছে যে আফগান সরকারের সাথে যুদ্ধ চলবে দীর্ঘ দিন। ফলে একসময় আলোচনা করার জন্য কাবুলে কোনো সরকারই থাকবে না।

অনেক আফগান এমন আশঙ্কাই করছে।

আমেরিকা ২০ বছর যুদ্ধ করে আফগানদের এক নতুন প্রজন্মের হাতে নতুন যুগের তালেবান শাসনের ভার তুলে দিয়ে গেল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com