আফগান শান্তিচুক্তি রক্ষায় কূটনৈতিক উদ্যোগ
সদ্য সই হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তি রক্ষার জন্য ব্যস্ত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে পর্দার আড়ালে। চুক্তির শর্তানুযায়ী বন্দী বিনিময় করতে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি অস্বীকৃতি জানালে এটি হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হলো, এক সপ্তাহ ধরে আফগানিস্তানে সহিংসতা বন্ধ থাকলেও হঠাৎ করে তা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বুধবার নিশ্চিত করেছে যে তারা তালেবানের বিরুদ্ধে ‘আত্মরক্ষামূলক হামলা’ চালিয়েছে। তাদের ভাষ্য হলো, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তালেবান।
তবে প্রধান বাধা হলো প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ৫ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন। আন্তঃআফগান সংলাপ শুরুর পথে এটি অন্যতম শর্ত।
তালেবান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের বন্দীরা মুক্তি পেলেই তারা আন্তঃআফগান শান্তি আলোচনায় যোগ দেবে।
অন্য দিকে ঘানি জোর দিয়ে বলছেন যে আলোচনার আগে বন্দী বিনিময় সম্ভব নয়। আফগান প্রেসিডেন্ট তার সর্বশেষ বিবৃতিতে ‘পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন’ করার জন্য তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তারা যদি বন্দীদের মুক্তি চায়, তবে তা করতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন বন্দী মুক্তির ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ঘানিকে রাজি করানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তালেবানের রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদরের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন, আর কাতারের আমির কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ঘানির সাথে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আন্তঃআফগান সংলাপের পথ পরিষ্কার করার জন্য প্রতিবন্ধকতাগুরো অপসারণের চেষ্টা চলছে।
সবকিছুই যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, সেজন্য পাকিস্তানও তাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি শান্তি প্রয়াসের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের জন্য আফগান প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।
কোরেশি বলেন, আন্তঃআফগান সংলাপের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বন্দীদের মুক্তি প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অবশ্য কাবুল কোরেশির উপদেশের প্রতি আপত্তি জানিয়ে তাদের উপদেশকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল।
পর্যবেক্ষকেরা বিশ্বাস করেন যে প্রেসিডেন্ট ঘানির ধারণা তাকে বর্তমান প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু তিনি মনে করেন য আন্তঃআফগান সংলাপে তার বড় ধরনের কোনো ভূমিকা সম্ভবত থাকবে না। এ কারণেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিচ্ছেন না।
নতুন ৫ বছরের মেয়াদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাকে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত রাখছে বলেই ঘানি অসন্তুষ্ট। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তঃআফগান সংলাপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তমূলক সরকারের জন্য ঘানির দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করা রোধ করাই উচিত।
আন্তঃআফগান সংলাপ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হওয়ায় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যে বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ কাবুল সফর করে ঘানি প্রশাসনের সাথে আলোচনা চালাতে পারেন।
চলতি বছরের শেষ দিকে পুনঃনির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগেই শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করে মরিয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সূত্র জানায়, এ কারণেই আশাবাদ জাগছে যে আন্তঃআফগান সংলাপের জন্য আফগানিস্তানের সব সংশয়ের অবসান ঘটাবেন ট্রাম্প।