‘ঐতিহাসিক’ চুক্তির চারদিনের মাথায় তালেবান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ বন্ধের ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’র চার দিনের মাথায় তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশে এ হামলা চালানো হয়। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সনি লেগেট হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, তালেবান যোদ্ধারা হেলমান্দে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে হামলা চালালে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এ বিমান হামলা করা হয়। আগের দিন মঙ্গলবারই তালেবানের শীর্ষ আলোচক ও গোষ্ঠীটির দ্বিতীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ও গনির মধ্যে ৩৫ মিনিট কথা হয়। এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে মার্কিন হোয়াইট হাউস।
আফগানিস্তানে দীর্ঘ দেড় যুগের সহিংসতা বন্ধ করে দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান। প্রায় দুই বছর ধরে আলোচনার পর শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র-তালেবানের চুক্তি অনুসারে, আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলা হয়। আমেরিকা প্রথমে আফগানিস্তানে মোতায়েন সেনা সংখ্যা ৮ হাজার ৬০০ জনে নামিয়ে আনবে। এরপর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশেষ করে তালেবানের পক্ষ থেকে কোনো সহিংসতা হয় কিনা, তা দেখার পর বাকি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ওয়াশিংটন।
চুক্তির ভিত্তিতে আগামী ১০ দিন পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই দিনের মাথায় সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। ওই দিনই আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিয়মিত হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তালেবান। মঙ্গলবার একটি কপার খনির কাছে তল্লাশি চৌকিতে গোষ্ঠীটির হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয় বলে দাবি করেছে কাবুল। এছাড়া হেলমান্দসহ ৯টি প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালেবানরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বলে জানায় আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, তালেবান নেতার সঙ্গে তার ‘খুব ভালো কথা’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আজ তালেবান নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে ভালো আলাপ হয়েছে। কোনো ধরনের সহিসংতা নয়- এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমরা সহিংসতা চাই না। আমরা দেখব কী ঘটতে যাচ্ছে… মূলত তালেবান নেতার সঙ্গে আমার ভালো কথা হয়েছে।’ তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘ইসলামী আমিরাতের পলিটিক্যাল ডেপুটি শ্রদ্ধেয় মোল্লা বারাদার আখুন্দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
বুধবার আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে এএফপি জানায়, ট্রাম্পের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির তালেবান নেতার ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই তারা এ অভিযান চালায়। রাতের ওই হামলায় আফগানিস্তানের ২০ সেনা ও পুলিশ নিহত হয়। ওই হামলার পর পাল্টা মার্কিন বাহিনী বিমান হামলা চালায় বলে দাবি ওয়াশিংটনের। কর্নেল লেগেট জানান, ওয়াশিংটন শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও তালেবানদেরও তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং ‘অপ্রয়োজনীয় হামলা’ বন্ধ করতে হবে। বুধবারের হামলাটি ‘আত্মরক্ষামূলক’ ছিল বলে দাবি করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তাছাড়া তালেবানদেরও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।