রোহিঙ্গা সঙ্কট: মিয়ানমারের মূল্য দেয়ার মাত্রা বাড়ছে

0

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতার ব্যাপারে অর্থপূর্ণ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে গত সপ্তাহে মিয়ানমার সরকারকে মূল্য দেয়া শুরু করতে হয়েছে।

২৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রী গার্ড মুলার ঘোষণা দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান চালানোর কারণে মিয়ানমারের সাথে উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত করছে বার্লিন। মুলার বলেন, ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে যে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মিয়ানমার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

মুলার যদিও এই স্থগিতাদেশের অর্থের পরিমাণ সম্পর্ক কিছু বলেননি। তবে একই সাথে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী জনগোষ্ঠিকে সহায়তার জন্য জার্মান সরকার ১৫ মিলিয়ন ইউরো (১৬.৫ মিলিয়ন ডলার) সহায়তা দেবে।

মুলার ইঙ্গিত দেন যে, মিয়ানমার দোষিদের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আর্থিক মূল্য আরোপ করা হলো এবং মিয়ানমার এই কাজগুলো করতে ব্যর্থ হলে এর মাত্রা আগামীতে আরও বাড়বে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘অগ্রহণযোগ্য অপরাধ’ করার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও ইঙ্গিত দেন মুলার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

জার্মানির পদক্ষেপ মিয়ানমার সরকার ও দেশের নেতা অং সান সু চির জন্য একটা বড় ধরনের সতর্কবার্তা। এর মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, ২০১৭ সালের ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক হতাশা বাড়ছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর গণহত্যা, গণধর্ষণ, অঙ্গহানি এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার অপরাধের সাথে জড়িত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া এই সহিংসতায় অন্তত ১০,০০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে।

অর্থপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকেই অগ্রাহ্য করেছে মিয়ানমার। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া যে গণহত্যার অভিযোগ আনে, সেখানে মিয়ানমার সরকার তার বিবৃতিতে বলেছে যে, গাম্বিয়ার অভিযোগ ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপর ভিত্তি করে’ তৈরি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে বৈধ ‘উচ্ছেদ অভিযান’ চালায়। পুলিশের চেকপোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আর্মির হামলার জবাবে ওই অভিযান চালানো হয়। অং সান সু চি আইসিজেকে বলেন যে, ২০১৭ সালে যেটা ঘটেছে, সেটা একটা অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আরসার হামলার মধ্য দিয়ে সেটার সূত্রপাত হয়েছে।

আইসিজে ২৩ জানুয়ারি গাম্বিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করে মিয়ানমারকে সতর্ক করে দেয়। এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং অপরাধের আলামত নষ্ট না করার জন্য মিয়ানমারকে নির্দেশ দেয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com