সরকারের নির্দেশে যেকোনো ব্যক্তির জামিন হতে পারে : খোকন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে দেশবাসী মনে করছে সরকারের নির্দেশে যেকোনো ব্যক্তির জামিন হতে পারে বা সরকার চাইলে আদালতের মাধ্যমে তা বাতিল করতে পারে।
বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিচার বিভাগের ওপর এমন নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুদকের (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় সাজা প্রদান ও জামিন নামঞ্জুর আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই করা হয়েছিল কিনা?
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক আদেশে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। পরে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেয়া হলে চার ঘণ্টার ব্যবধানে আউয়াল ও তার স্ত্রীকে কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই জামিন দেয়া হয়।
তিনি বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এর পরই জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্ননকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের সম্পাদক বলেন, গতকালের এ ঘটনা স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অযাচিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপির জামিন নিশ্চিত করার জন্য পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজকে বদলি করেন। জজের বদলির কারণে সুপ্রিম কোর্টের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপির জামিন নামঞ্জুর করার কারণে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জামিন কেলেঙ্কারি দেশের সাধারণ জনগণের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা নষ্ট করেছে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি করছি। একই সঙ্গে আইন সচিব, যুগ্ম সচিব ও জামিন প্রদানকারী বিচারককে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া জামিন কেলেঙ্কারির ঘটনাটি হাইকোর্টের একজন বিচারপতির অধীনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও নেছারাবাদ) আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ আদেশের পর জেলা দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। পরে তিনি দায়িত্ব যুগ্ম জেলা দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে বুঝিয়ে দেন। পরে ভারপ্রাপ্ত দায়রা জজ নাহিদ নাসরিন তার ক্ষমতাবলে সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীকে জামিন দেন।