সাত বছরে আমদানি-রফতানির আড়ালে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার
দেশ থেকে কেবল ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি- জিএফআই।
জিএফআই’র প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাত বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে আমদানি-রফতানির আড়ালে। জিএফআই’র কর্তাদের সাথে যমুনা টেলিভিশন যোগাযোগ করলে এই তথ্য জানান তারা।
তারা আরও জানিয়েছেন, গত দু’বছর জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তথ্যই দিচ্ছে না বাংলাদেশ।
বিশ্বজুড়ে অর্থপাচারের চুলচেরা বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি- জিএফআই’র প্রতিবেদনে। এক দশক ধরে কাজটি করছে তারা। মঙ্গলবার সবশেষ যে প্রতিবেদন প্রকাশ হলো, তাতে তথ্য এসেছে ১৩৫ উন্নয়নশীল দেশের।
জিএফআই বলছে, উন্নয়নশীল দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়, আমদানি-রফতানি পণ্যের প্রকৃত দাম গোপন করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ২০১৫ সালে বিদেশে পণ্য কেনা-বেচার যে খতিয়ান দিয়েছেন, তার ১৯ শতাংশের বেশি ভুয়া। আমদানিতে বেশি আর রফতানিতে কম দেখিয়ে ওই বছর গায়েব করা হয়েছে, এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার বা প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রিক রাউডেন বলেন, সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ যে বাণিজ্য করে তাতে ২০১৫ সালে কাগজপত্রের হিসাব আর প্রকৃত আমদানি-রফতানির অসঙ্গতি ছিলো প্রায় ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
জিএফআই’র হিসাবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৭ বছরে, মোট ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। এ সময়ে বছরে গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৭৫৩ কোটি ডলার বা ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বছর বছর বেড়েছে কাগজে-কলমের হিসাব আর প্রকৃত আমদানি-রফতানির অসঙ্গতি।
এবার জিএফআই ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তবে, বাংলাদেশের তথ্য আছে ২০১৫ পর্যন্ত। তাদের দাবি, জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ।
রিক রাউডেন বলেন, অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ কমট্রেডে নিয়মিত বার্ষিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তথ্য দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের কোন তথ্য দেয়নি। ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হয় কলকারখানার যন্ত্রপাতি, খনিজ জ্বালানি কিংবা চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির সময়। এসব আমদানির সময় ভাউচারে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দাম দেখানো হয়। রফতানির ক্ষেত্রে দাম দেখানো হয় কম। এ প্রক্রিয়ায় শত শত কোটি ডলার বিদেশে সরিয়ে নেন অনেক ব্যবসায়ী। বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি রাজস্ব বঞ্চিত হয় দেশ।
রিক রাউডেন বলেন, কাগজপত্রে হিসাব আর প্রকৃত আমদানি-রফতানির এই যে অসঙ্গতি তার মানে হলো বিপুল পরিমাণ কর ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। আমদানি-রফতানির আড়ালে যে টাকা পাচার হচ্ছে সঠিক নজরদারি থাকলে তার অন্তত ২০ শতাংশ কর আদায় করতে পারতো দেশটি। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই টাকার অংক অনেক বড়।
বাণিজ্যের ভুয়া তথ্য দিয়ে টাকা পাচার ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে জিএফআই।