রাজিব গান্ধী হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, এখানেও না, সেখানেও না
উত্তরপূর্ব দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এত বড় মাত্রায় ছড়িয়েছে যে, হাসপাতালে আহতদের মারা যাওয়া এবং পরিচয়হীন মৃতদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এখনও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যদিও মূল সহিংসতা কমার পর বেশ কিছু দিন চলে গেছে। গুজব রটার কারণে দিল্লী এখনও উত্তপ্ত রয়েছে। যে বিজেপি নেতা কাপিল মিশ্র দাঙ্গা উসকে দিয়েছিলেন, তিনি এখন শান্তি সমাবেশ করছেন। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর দ্রুত এক বিচারককে বদলি করে দেয়া হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপারে যেমন মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তেমনি দিল্লী সরকারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জন্মেছে তাদের। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (এএপি) গত এক সপ্তাহে বলতে গেলে কিছুই করেননি। তারা মূলত আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন, যাতে কেউ বলতে না পারে যে, তারা কি করছে বা করছে না।
এএপি দলের সদস্যরা বলছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে দোষারোপ করাটা অযৌক্তিক কারণ দিল্লী পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। কিন্তু এএপি শুধু ক্ষমতায় থাকা একটি দল মাত্র নয়। বহু বছর আগে তারা জনগণের আন্দোলনের রূপ নেয়ার চেষ্টা করেছিল। এএপির যেটা সবচেয়ে বেশি করা উচিত ছিল, সেটা হলো বিজেপি নেতৃত্বের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালো কথা বলা। জনগণকে রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর দেয়ার জন্য এএপি কিছুই করছে না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন জনগণ?
কেকটা নিয়ে আবার সেটা খেতেও চান
দিল্লীর সাম্প্রতিক অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে আমরা দেখেছি যে, এএপি শাহিন বাগমুখী মুসলিমদের ভোট যেমন চেয়েছে, তেমনি লোকসভায় নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দেয়া হিন্দুদের ভোটও চেয়েছে। এর অর্থ হলো আপনার কেকটি নিয়ে আবার সেটি খেতেও চেয়েছেন তারা। ২০১৫ ও ২০২০ সালের অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে কেজরিওয়াল এই অসম্ভব সমর্থনটাই পেয়েছেন।
কিন্তু উত্তরপূর্ব দিল্লীর যুদ্ধ এলাকা এখন এমন একটা হুমকি তৈরি করেছে যে, কেজরিওয়াল এখন তার কেকও পাবেন না, খাওয়াতো দূরের কথা।
এএপি কর্পোরেটর তাহির হোসেনের বিরুদ্ধে তার বাড়ির ছাদে পেট্রল বোমা মজুদের অভিযোগ ওঠার পর বিজেপি আর তার সহযোগিরা অভিযোগ করছেন যে, এই সহিংসতার আসল পরিকল্পনাকারী হলো এএপি। এর পরপরি, এএপি সরকার ফাইলে সই করে দিয়েছেন, যেখানে কানহাইয়া কুমার, অনির্বান ভট্টাচার্য এবং উমর খালিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তাহির হোসেনের ইস্যু নিয়ে এএপি এতটাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছে যে, বিজেপির কাছে তাদের এটা দেখাতে হয়েছে যে, তারা অতটা চরম বামপন্থী নয়। সে কারণেই কানহাইয়া কার্ড খেললো তারা। এই আচরণের মধ্যে রাজিব গান্ধীর ছায়া দেখা যাচ্ছে, যিনি ভেবেছিলেন যে, মুসলিম আর হিন্দু উভয়কেই খুশি রাখতে পারবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত উভয়কেই অখুশি করেছেন তিনি। মোদির ভোটাররা এএপিকে তাহির হোসেনের কারণে দোষারোপ করবে, আর মুসলিম ভোটাররা এএপিকে দোষ দেবে, কারণ তারা বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি।
সেক্যুলার নন, সাম্প্রদায়িকও নন
এবার এএপির পদক্ষেপ ভুল হতে পারে। এএপি এবং দিল্লী সরকারের যে ধারণা এবং উত্তরপূর্ব দিল্লীর দায় এড়ানোর যে কৌশল, সেটা দীর্ঘমেয়াদে তাদের ক্ষতি করতে পারে। দিল্লীতে স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয় পর্যায়েও এটা হতে পারে। এই মুহূর্তে তাদের হিসেব হলো দিল্লীর মুসলিম ভোটারদের অন্য কোন উপায় নেই, এবং এ মুহূর্তে সামনে কোন নির্বাচনও নেই। সে কারণে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সময় পাবে তারা। অন্যভাবে বললে, মুসলিম ভোটগুলো এমনিতেই পাবে, এ রকম একটা ধারণার মধ্যে বাস করছে তারা, যেমনটা সেক্যুলাররাও একসময় করেছে।
উত্তরপূর্ব দিল্লীতে মুসলিম আর হিন্দু উভয়েই নিহত হয়েছে। মুসলিমদের বাইরে, এএপি উত্তর প্রদেশ লাগোয়া অঞ্চলকেও অবজ্ঞা করতে পারবে না, যেখান থেকে তারা খুব একটা ভোট পায়নি। এর ফলে দিল্লীতে কংগ্রেসের দরজা খুলে যেতে পারে, কিন্তু কংগ্রেস এখানেও নেই।
দাঙ্গা পীড়িত এলাকায় এএপি এখনও যথেষ্ট করছে না। ত্রাণ ক্যাম্প নির্মাণে ধীরগতিতে এগুচ্ছে তারা। তাদের এমপি আর কর্মীদের ভুক্তভোগীদের কাছে যেতে দেখা যাচ্ছে না। অসহায়দের সাহায্য করতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের অজুহাত হলো: তারা কাজ করে আগে কোন স্বীকৃতি পাননি।
এএপি চায় তারা সেক্যুলারও হবে না, সাম্প্রদায়িকও হবে না। মোদি সরকারের সাথে সঙ্ঘাতেও যেতে চায় না তারা, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কার্যকারিতাই পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। ২০১৬ সালে কেজরিওয়াল যখন মোদির বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন, তখন সেটা আমরা দেখেছিলাম। আর ধর্নার রাজনীতি তারা করতে চান না।