শ্রীলঙ্কা নির্বাচন: নতুন জোট গঠন করে বিক্রমাসিঙ্গেকে মানতে বাধ্য করলেন সাজিথ

0

২ মার্চ মধ্যরাতে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দিয়ে গেজেট জারি করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা। পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে মাত্র সাড়ে চার বছর পার করেছে বর্তমান পার্লামেন্ট। এ অবস্থায় পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার পর দ্বীপরাষ্ট্র এখন নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে। ২৫ এপ্রিল নির্বাচন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং সহজেই নির্বাচনে জিতবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিরোধী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রানিল বিক্রমাসিঙ্গে বর্তমান সরকারকে এমন এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন, যে কি-না ‘ভিক্ষার বাটি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে’।

গেলো সপ্তাহে এক জনসমাবেশে বিক্রমাসিঙ্গে বলেছেন, “ভেবে দেখুন কে একটা দৃঢ় দেশ গড়ে তুলতে পারবে এবং বিশ্বের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করবে না, সেটা মাথায় রেখে ভোট দিন। তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকারের মতো আর কোন সরকারই অতীতে এভাবে ভিক্ষা করে বেড়ায়নি।

শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় মাতারা জেলায় ইউএনপির অফিস খোলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিক্রমাসিঙ্গে বলেন যে, ২০১৫ সালে তার সরকার একটা ‘মৃত অর্থনীতি’ পেয়েছিল এবং সেটাকে কর্মক্ষম করে তুলেছিল।

বিক্রমাসিঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, “আমরা জিএসপি প্লাস সুবিধা ফিরিয়ে এনেছিলাম”। ইইউ-এর বাণিজ্য ছাড়ের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১০ সালে ওই সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ইইউ।

বিক্রমাসিঙ্গে এমন সময় এ মন্তব্য করলেন যখন বর্তমান গোতাবায়া রাজাপাকসার সরকার শ্রীলঙ্কা বিষয়ক জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রস্তাবনায় কো-স্পন্সরের জায়গা থেকে সরে এসেছে।

বিক্রমাসিঙ্গে বলেন যে, তার সরকার খরা, বন্যা, এবং ইস্টার সানডে হামলার কারণে সমস্যায় পড়েছে কিন্তু তারা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করে তোলা শুরু করেছিলেন এবং পর্যটন শিল্পকে পুনর্নির্মাণ শুরু করেছিলেন, ইস্টার সানডে হামলার পর যে শিল্প ধসে পড়েছিল।

তিনি জনগণের প্রতি জোর আহ্বান জানান যাতে তারা ইউএনপি সরকারের প্রথম ১০০ দিনের সাথে বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিনকে মিলিয়ে দেখেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে।

এদিকে, বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা এবং ইউএনপির ডেপুটি প্রধান এবং বিক্রমাসিঙ্গের অপছন্দের ব্যক্তি সাজিথ প্রেমাদাসা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের মতো করে ‘সামাগি জন বালাবেগায়া (এসজেবি)’ নামে নতুন জোট গঠন করেছেন।

প্রেমাদাসা ও বিক্রমাসিঙ্গের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই দুই সপ্তাহ আগে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইউএনপি-নেতৃত্বাধীন জোট হিসেবে এসজেবি গঠন করা হয়। ইউএনপি ওয়ার্কিং কমিটি গত শুক্রবার এই জোটের অনুমোদন দিয়েছে। যদিও নতুন জোট এসজেবির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে প্রেমাদাসা ও বিক্রমাসিঙ্গের সমর্থকদের মধ্যে কোন সমঝোতা হয়নি।

প্রেমাদাসা সমর্থন বাড়াচ্ছেন। চাম্পিকা রানাবাকান্দের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী জাথিকা হেলা উরুমায়া (জেএইচইউ) এবং রউফ হাকিমের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেসের (এসএলএমসি) মতো ক্ষুদ্র দলসহ ১২টি দল এসজেবিতে যোগ দিয়েছে।

এসজেবির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মাদ্দুমা বান্দারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইউএনপি নেতা রানিল বিক্রমাসিঙ্গেসহ সব দলের নেতাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য নতুন জোটের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এই জোটের সাথে যাওয়া ছাড়া বিক্রমাসিঙ্গের সামনে কোন পথ খোলা নেই।

জোট ঘোষণার সময় সাজিথ প্রেমাদাসা উপস্থিত জনতাকে বলেন: “সামাগি জন বালাবেগায়া এমন একটি শক্তি যেটা জনগণের কল্যাণের জন্য বিপ্লব গড়ে তুলবে এবং শুধু আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নয়, বরং সব সময় জনগণের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে একটা স্থায়ী প্ল্যাটফর্ম এটা”।

নতুন জোটকে টেকসই আখ্যা দিয়ে প্রেমাদাসা বলেন যে, তিনি আশা করেন যে, জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে এসজেবি সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হবে এবং পরবর্তী প্রভিন্সিয়াল কাউন্সিল নির্বাচনেও তারা বিজয়ী হবে। তিনি জানান যে, ইউএনপির ওয়ার্কিং কমিটি ‘সামাগি জন বালাবেগায়া’ গঠনের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে।

২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান প্রেমাদাসা, কারণ তার দল ইউএনপি সংখ্যাগুরু সিংহলীদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। তবে, এখন তারা পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ভালোবাসা ও দয়ার মতো বৌদ্ধ দর্শনের উপর ভিত্তি করে একটা নতুন সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

জনগণের উল্লাসের মধ্যে প্রেমাদাসা ঘোষণা দেন যে, “সবার দুর্দশা লাঘব হোক। সকল প্রাণী ভালো হোক। এটাই হবে আমাদের রাজনৈতিক পথ যেখানে আমরা বৌদ্ধধর্মের বিশুদ্ধ দর্শনকে অনুসরণ করবো। আমরা সামনে যে চলা শুরু করেছি, সেটাকে আর পেছনে ফেরানো যাবে না”।

এসএলপিপি যদিও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু ইউএনপি জোটের পথ করে নেয়ার সক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখা যাবে না। এটা বিশেষভাবে সত্য কারণ বর্তমান সরকার এখনও ঋণের বোঝা থেকে বেরিয়ে আসার কোন মেকানিজম বের করতে পারেনি এবং যুদ্ধ পরবর্তী সমঝোতা প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

যে বিষয়টি ইউএনপিকে দলের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও বিভাজনের দিকে নিয়ে গেছে, সেটার কারণ হলো দলীয় প্রধানের পদ থেকে রানিল বিক্রমাসিঙ্গের সরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অস্বীকৃতি। নভেম্বরের নির্বাচনে দলের হেরে যাওয়ার পেছনে প্রধান হিসেবে তাকেই মনে করা হয়। কারণ প্রেমাদাসাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে এবং এর পর নির্বাচনী প্রচারণাতেও অংশ নেননি বিক্রমাসিঙ্গে।

প্রেমাদাসা যেহেতু এখন নতুন ‘সামাগি জন বালাবেগায়া’ গঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেখানে এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার আত্মবিশ্বাস এবং সিংহলী বৌদ্ধ নেতা হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব – যিনি একই সাথে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে শত্রুপ্রবণ নন – তার এই বৈশিষ্ট্যগুলো হয়তো সিংহলী বৌদ্ধ এবং উদারপন্থীদের প্রতি একটা আবেদন তৈরি করতে পারে এবং নভেম্বরের নির্বাচনের ভয়াবহ পরাজয় থেকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য ইউএনপিকে আরেকটি সুযোগ দিতে পারে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com